আজ বুধবার, ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রসঙ্গে

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৯, ২০২৪, ০৪:০১ পূর্বাহ্ণ
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রসঙ্গে

Sharing is caring!

বিমল কান্তি দাস
বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত দেশের জাতীয় রাজনীতিতে যে কয়জন বামপন্থী রাজনীতিক অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম অন্যতম। যার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল মূলত পাকিস্তান আমলে। ওই সময় দুর্বার ছাত্র আন্দোলন সংগঠিতকরণেও তাঁর অনন্য ভূমিকা ছিল।
মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে লুটপাট ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিস্তার লাভ করে তার বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষের সার্বিক মুক্তির জন্য শোষণ-বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে কমিউনিস্ট পার্টি ও গণমানুষের আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে অবিচল রয়েছেন কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
কোনো হঠকারিতা নয়, সুবিধাবাদিতা নয়, শটকাট পথ নয়, বামপন্থার বাল্যব্যাধি নয়, সত্যিকার অর্থে গণমানুষের মুক্তির জন্য মার্কসবাদ-লেনিনবাদের রাজনৈতিক দর্শন চর্চার মাধ্যমে কমিউনিস্ট পার্টি (শ্রমিকশ্রেণীর অগ্রবাহিনী) গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একজন কাণ্ডারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৯০ দশকে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিপর্যয় নেমে আসে। পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে পুঁজিবাদের পুনরুত্থান শুরু হয়। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট বিরোধী প্রচারণা শুরু হয়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সারির প্রায় সকল নেতা (১৩ জন বাদে) সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ অচল বলে বিবৃতি দিতে থাকেন। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে ঐ সময়ে পৃথিবীর বহু দেশে কমিউনিস্ট পার্টির নেতারাই পার্টি বিলুপ্ত করে পুঁজিবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিশে যেতে থাকে। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি রক্ষা করতে অনেক নিচের সারি থেকে এগিয়ে এসেছিলেন কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিলোববাদী বক্তব্য খন্ডন করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদের পক্ষে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় লিখতে শুরু করলেন। সেলিম ভাইয়ের সাথে যোগ দিলেন সরদার ফজলুল করিম। মনজুরুল আহসান খানও লেখা শুরু করলেন। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় সেলিম ভাইয়ের লেখাগুলো নিয়মিত পড়তাম। ঐ পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট পার্টি রক্ষা করা কঠিন ছিল। পৃথিবীর অনেক দেশে কমিউনিস্ট পার্টি ঐ সময়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের অবদান কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। কিন্তু প্রশ্ন অন্য জায়গায়। বর্তমানে কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের প্রয়োজনীয়তা কি ফুরিয়ে গেছে?
না, ফুরিয়ে যায় নি। কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের বিকল্প দেখি না। ১৯৯০ দশকে বিলোপবাদী ধারা সাময়িক পরাজিত হলেও তা শেষ হয়ে যায়নি। যে কোন সুযোগে ও সময়ে সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ অচলের বক্তব্য আবারও আসতে পারে। যারা সরকার ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে সু্যোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন, যারা এনজিও করেন, শ্রমিক আন্দোলনে যারা সরকার ও রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধার আশা করেন তারা আবারও যে যেকোন সময়ে মার্কসবাদ অচল বলবেন তাতে সন্দেহ নেই। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের প্রয়োজনীয়তা তাই এখনো থেকে যাচ্ছে।
তবে কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের বিকল্প নেতৃত্ব পর্যায়ক্রমে গড়ে উঠতে হবে। কমরেড সেলিম তো অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন না। তবে চেয়ারে বসিয়ে দিলেই, পদ-পদবি পেয়ে গেলে কেউ বিকল্প হতে পারবেন না। নেতাদের মধ্যে সেই যোগ্যতা অর্জনের চিন্তা ও চেষ্টা থাকতে হবে। নেতাদের অনেকের মধ্যে তা যখন দেখি না তখন খুব কষ্ট হয়। যেনতেন প্রকারে পদ দখল করা আর নেতা হওয়া এক জিনিস নয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন ও বাম রাজনীতিতে কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম একটা উদাহরণ এটা মানতেই হবে। শুধু একজন নয়, এমন একঝাঁক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশে প্রয়োজন।