সুনামগঞ্জ শহর এলাকায় সরকারি ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নিজস্ব ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। জায়গার পরিমাণ ৩৬ শতক। এ জায়গাটি জেলা শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন জামাইপাড়া সড়কের পাশে হোসাইন পার্টসের পেছনে অবস্থিত। জোরপূর্বক অবৈধভাবে দখলে আছেন পাশের জায়গার মালিক জয়শ্রী চৌধুরী ও তার স্বামী স্বপন সরকার। সম্প্রতি অবৈধভাবে দখল করে ভূমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন জয়শ্রী ও স্বপন। প্রথমতলার ছাদের ঢালাই কাজও সম্পন্ন করে ফেলেছেন এই দম্পতি। খবর পেয়ে নিষেধাজ্ঞা দিতে গিয়ে ওই দম্পতির রোষানলে পড়েন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা- কর্মচারী।
জানা যায়, তেঘরিয়া মৌজার ১৫৬৪ নং খতিয়ানে ১৫১৩ নং দাগে ৭২ শতক জায়গা সমানভাবে কামিনী মোহন পাল ও মহিম চন্দ্র পালের নামে রেকর্ড-ভুক্ত হয়। ১৯৬৫ সালে কামিনী মোহন পাল স্থায়ীভাবে ভারত চলে গেলে তার নামের ৩৬ শতাংশ জায়গা সরকারে নামে ও নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়।
পরবর্তীতে জায়গাতে অবৈধভাবে দখলে থাকা মহিম চন্দ্র পালকে দখল ছেড়ে দেয়ার নোটিশ দেয়া হয়। পরে মহিম চন্দ্র পাল আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত সরকার পক্ষের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এরপর মহিম চন্দ্র উক্ত ৩৬ শতক জায়গা অবিনাশ চৌধুরীকে দান করে দেন। পরে অবিনাশ চৌধুরীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে জায়গার মালিক হয়ে বাকি ৩৬ শতকেও অবৈধ দখল করেন জয়শ্রী চৌধুরী। দখল উচ্ছেদে সরকার পক্ষ থেকে ২০১৯ সালে আদালতে আবার মামলা করলে বসত বাড়ির অবিচ্ছেদ্য অংশ বিবেচনায় নতুন কোনো আগন্তুকের প্রবেশ না করানোর শর্তে জায়গার প্রকৃত মূল্য পরিশোধ করে সরকারের কাছ থেকে ক্রয়ের আদেশ দেন। পরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সরকারের টাকা পরিশোধ না করেই জয়শ্রী ভিন্ন রেজি. দলিলে নতুন আগন্তুক সামাদ মিয়া ৭ শতক ও রেণু মিয়া নামের দুই ব্যক্তির কাছে ৬ শতক জায়গা বিক্রয় করেন। পরবর্তীতে অবশিষ্ট জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করেন।
খবর পেয়ে ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দিতে গেলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয় ভীতি দেখিয়ে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখেন এই দম্পতি। সূত্রে জানায়, জয়শ্রী চৌধুরী ও তার স্বামী স্বপন সরকার পরস্পর যোগসাজশে জাল- জালিয়াতির মাধ্যমে সরকার মালিকানাধীন ৩৬ শতক ভূমি ৬১৪২ নং আরএস খতিয়ানে নিজ নামে রেকর্ড করেন। উক্ত জয়শ্রী চৌধুরী বা তার পিতা অবিনাশ চৌধুরী মাতা জ্যোস্না রানী চৌধুরী এসএ মালিকানাধীন ৩৬ শতকে রেকর্ডীয় ভূমির মালিক কামিনী কুমার চৌধুরী বৈধ কোনো উত্তরাধিকারী নয়। সরকারি স্বত্ব ফিরে পেতে সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি উপজেলা ভূমি কমিশনার জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে মামলা দায়ের করলে সরকারের পক্ষে রায় আসে।
রায়ে বলা হয় মহামান্য হাইকোর্টের রায় গোপন রেখে নিম্ন আদালতকে বিভ্রান্ত করে মামলা দায়ের ও আদেশ প্রাপ্তি হওয়া সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের সামিল জয়শ্রী চৌধুরীর নামীয় ৬১৪২ আরএস খতিয়ান থেকে নালিশি আরএস ৩৬০৩ দাগের ৩৬ শতক ভূমি কর্তন করে অর্পিত সম্পত্তি ১/১ খতিয়ানে বাংলাদেশ সরকারের নামে রেকর্ড করা হলো এবং আনুষঙ্গিক রেকর্ড সংশোধন করা হলো। ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. ছিদ্দিকুর রহমান দৈনিক দেশের কন্ঠকে বলেন, এসিল্যান্ড স্যারের নির্দেশে আমরা ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দিতে গিয়েছিলাম। তারা নিষেধ না শুনে উল্টো আমাদেরকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কাজ অব্যাহত রেখেছে। জয়শ্রী চৌধুরীর স্বামী স্বপন সরকার বলেন, এটা আমাদের বাপ-দাদাদের জায়গা সরকারের নয়। সরকারের জায়গা আমাদের পেছনে। এই জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা হলে আমাদেরকে কিনে নিতে রায় দেন। কিন্তু জায়গার টাকা দেয়ার আগেই সরকার আবার রায়ের উপর আপিল করে তাই আর টাকা দেয়া হয়নি। এখন যে ভবন বানাচ্ছি এখানে আমার আগের ভিটা ছিল। বন্যার পানি উঠে যায় তাই উঁচু করে বানাচ্ছি।
সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, এই জায়গা নিয়ে মামলা ছিল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে। আমরা সেই রায় পেয়েছি। তারা এখানে আর ভবন নির্মাণ করতে পারবে না। প্রয়োজন হলে আমরা উচ্ছেদ করে দেবো।