আজ বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধানের ভরা মৌসুমেও ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে চাল

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৪:৪১ পূর্বাহ্ণ
ধানের ভরা মৌসুমেও ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে চাল

Sharing is caring!

টাইমস নিউজ

ধানের ভরা মৌসুমেও ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে চাল।

বেনাপোলে চালের মূল্য ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন আমন ধান ঘরে উঠলেও দাম কমছে না। ধানের এই ভরা মৌসুমে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হচ্ছে ভারতীয় চাল। তারপরও খুচরা বাজারে কমছে না দাম।

চলতি মৌসুমে ধানের দাম বেশি, যে কারণে কমছে না চালের দাম-এমনটাই বলছেন অটোরাইস মিল মালিক ও ধান ব্যবসায়ীরা। আমদানিকারকদের মতে, ভারতে চালের দাম বেশি, এ কারণে আমদানিকৃত চাল কম দামে বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ভরা মৌসুমেও কম দামে চাল না কিনতে পেরে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। সীমান্ত অঞ্চলে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠায় চালের মূল্য কমছে না বলে মনে করছেন সাধারণ ক্রেতারা। বিশেষ করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারির ব্যবস্থা না থাকায় মূল্য কমছে না বলে মত তাদের।

যশোরের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সিংহভাগ ধানের উৎপাদন হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলে ২১ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। ৮০ শতাংশ ধান ইতোমধ্যে কাটা হয়ে গেছে। এবার ধানের বাজার চড়া। ১৩৫০ থেকে ১৪৫০ টাকা মনে দাম পাচ্ছেন কৃষক। এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি অটোরাইস মিল ঘুরে দেখা যায়, এখনো ধান কিনতে পারেননি মিল মালিকরা। কৃষকেরা তাদের ধান বাজারজাত করতে পারেননি এখনো। তবে মিল মালিকরা অন্য জেলা থেকে ৩২-৩৪ টাকা কেজি দরে ধান কিনছেন। এসব ধান থেকে চাল প্রস্তুত করতে দাম পড়ছে ৫২ টাকা।

দেশের বাজারে দাম স্বাভাবিক রাখতে বিনা শুল্কে ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। ১৭ নভেম্বর ভারত থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়। এক মাসে এই বন্দর দিয়ে ৪ হাজার ৫০০ টন ভারতীয় চাল আমদানি হয়েছে। এসব চাল ৪১০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হচ্ছে। তবে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দরে জোর করে প্রতি টন চাল ৪৫০ মার্কিন ডলারে শুল্কায়ন করায় মূল্য বাড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে একই মোটা চাল সাতক্ষীরার ভোমরা কাস্টমস হাউজে শুল্কায়ন হচ্ছে প্রতি টন ৪১০ মার্কিন ডলারে।

দেশে আমন ধানের বাম্পার ফলন এবং পর্যাপ্ত ভারতীয় চাল আমদানি হলেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি এ অঞ্চলের খুচরা বাজারে। ভারত থেকে আমদানিকৃত স্বর্ণা চাল-৫ বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৪-৫৫ টাকায়। আর দেশি মিনিকেট, নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। ভরা মৌসুমে কম দামে চাল কিনতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ ক্রেতারা।

বেনাপোল বাজারে চাল কিনতে আসা মেহের আলী বলেন, ‘এখন ধানের মৌসুম, আবার ভারত থেকে গাড়ি-গাড়ি চাল আমদানি হচ্ছে। তারপরও চালের দাম কমছে না কেন? প্রতিবছর এ সময় নতুন ধান উঠলে বাজারে চালের দাম অনেক কমে যায়। কিন্তু এবার বাজারের চিত্র উলটো।’

আরেক চাল ক্রেতা আতাউর রহমান বলেন, ‘দেশে পর্যাপ্ত ধানের আবাদ হয়েছে। তারপরও দাম কমছে না কেন? আমরা গরিব মানুষ, দাম না কমলে কীভাবে চলব? হয়তো সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমছে না। তাই আমি মনে করি, প্রশাসন বাজারে নজরদারি করলে দাম অনেকটা কমে যাবে।’

বেনাপোল বাজারের চাল ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন বলেন, বাজারে এখনো নতুন চাল আসেনি। কিছুদিনের মধ্যেই নতুন চাল বাজারে আসবে। আমরা ভারত থেকে আমদানিকৃত স্বর্ণা-৫ চাল ৫৪ টাকা কেজি দরে পাইকারি কিনছি। তা ৫৫ টাকা কেজি দরে খুচরা বিক্রি করছি। বাজারে দেশি মিনিকেট ও সম্পাকাটারি চাল ৭১ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বেচাবিক্রি অনেকটা কম। নতুন চাল বাজারে আসলে স্বাভাবিক হবে চালের দাম।

যশোরের চাল আমদানিকারক মাহবুব আলম বলেন, ধীরগতিতে চলছে চাল আমদানি। সরকার প্রথমে ১৭ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ২৩ দিন সময় বেঁধে দেয় ৩ লাখ ৯২ হাজার টন চাল আমদানির। পরে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ায় সরকার। তবে বাকি কয়েকদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভারত থেকে চাল আমদানি হবে। শিগগিরই হয়তো চালের দাম কমে আসবে।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, ‘বাংলাদেশে চালের ঘাটতির আশঙ্কায় সরকার ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। বেনাপোল বন্দরসহ বিভিন্ন বন্দর দিয়ে পর্যাপ্ত চাল আমদানি হচ্ছে। তারপরও দাম কমছে না কেন এ প্রশ্ন আমারও! মনে হয় বড় একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। যে কারণে বাজারে চালের দাম কমছে না। ভোক্তা অধিকার যদি ঠিকমতো বাজার নজরদারি করে তাহলে দাম কমতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ১৭ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বন্দরে ৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানি হয়েছে। এই চাল ৫৪ থেকে সাড়ে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ভারতে শুল্ক কমানোর জন্য চালের দাম বৃদ্ধি করে দিয়েছে ভারতের রপ্তানিকারকরা। এই বন্দরে আমদানিকারকদের অনেকেরই চালের এলসি (ঋণপত্র) করা আছে। এসব চাল আমদানি হলে দাম অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করছি।

বেনাপোল কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘শুল্কমুক্তভাবে বেনাপোল বন্দরে ৪১০ ডলারে চাল আমদানি হচ্ছে। ১৭ নভেম্বর থেকে এক মাসে ৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে। যেহেতু চাল একটি নিত্যপণ্য এবং দেশের বাজারে চাহিদা রয়েছে, সেহেতু আমরা কাস্টমসের সব কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করছি। বর্তমানে চাল আমদানির সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।