আজ রবিবার, ১২ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবহমানকাল ধরে আমাদের ভূখন্ডটি বাংলাভূমি নামেই পরিচিত

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১১, ২০২৫, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ণ
আবহমানকাল ধরে আমাদের ভূখন্ডটি বাংলাভূমি নামেই পরিচিত

Sharing is caring!

সৈয়দ রুহুল আমিন   

আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
শিরোনাম- পূর্ব পাকিস্তান নামটি ১৯৫৬ সালের ২৩শে মার্চ থেকে ১৯৭১ সালের আমাদের স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ ২৬শে মার্চ পর্যন্ত বহাল ছিলো।
এবার বিস্তারিত-
অন্যান্য সবার মতো আমারও ধারণা ছিলো যে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটেছে । পাকিস্তান নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে এবং নুতন রাষ্ট্রটি পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুইটি প্রদেশে বিভক্ত।
কিন্তু বিভিন্ন লেখা পড়ে এবং তথ্য পেয়ে ধীরে ধীরে ধারণাটি সম্পূর্ণ বদলে গেছে।
বেশ কিছুদিন আগে ‘ফিফটিন গভর্ণরস আই সার্ভড উইথ’ নামে বইটির বাংলা অনুবাদ আমার হাতে আসে। এই বইয়ের মূল লেখক হচ্ছেন মেজর(অব) এস.জি.জিলানি আর অতি চমৎকার অনুবাদ করেছেন জনাব আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু।
এই বইটি অত্যন্ত তথ্যবহুল।এই তথ্য সমুদ্র থেকে মূল প্রাসঙ্গিক তথ্যটি তুলে ধরছি-
‘১৯৫৫ সালের ১৫ই জুন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জনাব আমির উদ্দিন পূর্ববাংলার গভর্ণর জেনারেল হিসেবে যোগদান করেন। জনাব আমির উদ্দিনের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনটি ঘটে।প্রদেশ হিসেবে পূর্ব বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তান নামকরণ।
দ্বিতীয় তথ্যটি হচ্ছে ১৯৫৬ সালের ২৩শে মার্চ গণপরিষদের সদস্যরা গভর্ণর জেনারেলের বাসভবনে এক বিশেষ সভায় যোগদান করেন।
ওই সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের নিজস্ব সংবিধান গ্রহণ করা হয়।উক্ত সভায় পাকিস্তানকে একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
আমার প্রশ্ন-
কিন্ত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রাজধানী তখন করাচীতে ছিলো।তাহলে করাচী বাদ দিয়ে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় এই সভাটি হলো কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর উক্ত বইয়ে পাইনি।
আরেকটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উঠে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় অবস্থান এবং পরিস্থিতি কি ছিলো?
এই প্রশ্নের উত্তরও পাইনি।
তবে ভারতের রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি কি ছিলো তা ভারতীয় গবেষক শ্রদ্ধেয় অরিত্র সোমের প্রবন্ধে পাই।
গুগুলে প্রাপ্ত উক্ত প্রবন্ধে ভারতের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। অর্থাৎ পাকিস্তানও একটি ডমিনিয়ন রাষ্ট্র ছিলো।
উক্ত প্রবন্ধটি অবিকল তুলে ধরছি-
অরিত্র সোম |
January 26, 2021
স্বাধীনতার পরেও প্রায় তিন বছর ‘ব্রিটিশ শাসন’ জারি ছিল ভারতে!
“রাত বারোটায় গোটা পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে থাকবে, ভারত তখন স্বাধীনতা ও নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে জেগে উঠবে।”
আজও এই দেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই কথাটি। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ছিল এক অবিশ্বাসের রাত। দীর্ঘ দুশো বছর ধরে রক্ত ঝরানোর পর এসেছে কাঙ্খিত স্বাধীনতা। ভারত অবশ্য ততদিনে দুভাগ হয়ে গেছে, লাখ লাখ মানুষের অসহায়তা দেখেছে। তবুও, এটা স্বাধীনতা…
১৯৪৭-এর পর ১৯৫০। আরও এক মাইলস্টোন। স্বাধীন ভারতে এবার সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হল। তৈরি হল পৃথিবীর সবথেকে বড়ো এবং সুন্দর সংবিধান। ভারত এবার সব দিক থেকেই এক নতুন স্বপ্নের সওদাগর। এত কিছু তো হল; কিন্তু একটা ব্যাপার আমরা অনেকেই এড়িয়ে যাই। বলা ভালো, অতশত নজরেও আসেনি ইতিহাস পড়তে গিয়ে।
কী ব্যাপার? ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৫০-এর ২৬ জানুয়ারি— এর মধ্যবর্তী সময় ভারতের পরিস্থিতি কী ছিল? কেমন ছিল স্বাধীনতার পরের তিনটি বছর?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেই ব্রিটিশরা বুঝতে পারছিল, তাদের সাধের উপনিবেশগুলো এবার হাতছাড়া হতে চলেছে। আর ভারত তো সেখানে ছিল ‘সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস’! তাকে এত সহজে তো ছাড়া যাবে না। কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনের ঝাঁজ ক্রমশ বাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা প্রদান ছাড়া আর কোনো উপায়ই খুঁজে পেল না ব্রিটিশরা। তখন ভারতের ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন। ঠিক করা হল, দেশ স্বাধীন হবে বটে, কিন্তু দুটো ভাগে ভাগ করতে হবে। তৈরি হল ভারত আর পাকিস্তান। রেডক্লিফের ছুরি কয়েক লাখ মানুষকে রাতারাতি ঘরছাড়া করল।
কিন্তু, স্বাধীনতা এল। তার মানে মাথার ওপর আর ব্রিটিশরা নেই! এখানেই একটু ভুল হল। ওই যে বললাম, ১৯৪৭-১৯৫০’এর মধ্যবর্তী সময়ের কথা। নতুন একটি রাষ্ট্র; তার না আছে আইনকানুন, না আছে সংবিধান। শিল্প-কৃষি-ব্যবসা সবকিছু নিয়েই অনন্ত পরিকল্পনা পড়ে আছে সামনে। হঠাৎ করে কি মাথার ওপর থেকে হাত সরিয়ে নেওয়া যায়? ঠিক হল, যতদিন না সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, ততদিন সিংহাসনে ব্রিটিশরাই থাকবে। ব্রিটিশ রাজশক্তির অধীনে থাকবে ভারত; তবে শুধু এইটুকুই। বাকি ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে দেশ। তখন বাকিংহাম প্যালেসের মসনদে রয়েছেন সম্রাট ষষ্ঠ জর্জ। তাঁর নামেই শপথ নেবেন ভারতের নেতারা।
এই পুরো বিষয়টিকে বলা হয় ‘ডোমিনিয়ন পিরিয়ড’। এই সময় ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হলেন বিদায়ী ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন। যেহেতু সাধারণ নির্বাচনের কোনো বিষয় ছিল না, তাই সবকিছু সুস্থভাবে টিকিয়ে রাখার জন্যই এমন বন্দোবস্ত। একটা দেশ নতুন করে তৈরি হচ্ছে, তাকে গুছিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয় সময় তো দিতে হবে। তবে কেবল কেন্দ্রীয় সরকারেই নয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীকেও নিয়ন্ত্রণ করতেন ব্রিটিশ ফিল্ড মার্শাল। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগও করে দিত ব্রিটিশরা।
তবে এই তিন বছরে ভারতের ভিত তৈরি করার কাজটি শুরু করে দিয়েছিলেন জওহরলাল নেহরুরা। প্রথমত ও প্রধানত, সংবিধান তৈরির কাজ আরও দ্রুতগতিতে হতে থাকে। দেশের আইনকানুন, শিল্পনীতি, কৃষি-ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা চলতে থাকে। এবং সেইসঙ্গে দেশীয় রাজ্যগুলোকে ভারতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ চলতে থাকে। সেখানে যেমন ছিল হায়দ্রাবাদের নিজামের রাজ্য, তেমনই ছিল কাশ্মীর। বলা ভালো, এই কয়েক বছর ছিল ভারত রাষ্ট্রের ভিত তৈরি হওয়ার সময়। ব্রিটিশরা কেবল সিংহাসনে বসার দায়িত্বটুকু পালন করেছিল।
শেষমেশ এল ১৯৫০ সাল। এল ২৬ জানুয়ারি। এই দিনটি থেকে গোটা দেশে সংবিধান প্রয়োগ করা হল। তৈরি হল নির্বাচনী প্রক্রিয়া। ঠিক এক বছর পরেই যা আয়োজিত হবে দেশ জুড়ে। তৈরি হল শাসন কাঠামো। রাষ্ট্রপতির সিংহাসনে বসলেন ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ। সব মিলিয়ে এক নতুন পথ চলা। এবার পুরোপুরি জায়গা ছেড়ে দিল ব্রিটিশরা। ডোমিনিয়ন পিরিয়ড শেষ হয়েছে। এবার ভারতের নতুন করে পথ চলা শুরু।’
শেষ কথা-
ভারতের রাষ্ট্রীয় নাম দি রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া। কিন্তু হাজার বছর ধরে এই ভূখন্ডটি ভারত এবং হিন্দুস্তান নামেও বিশ্বে পরিচিত।
রাষ্ট্রীয় নামের মতো বাকী দুইটি নামও ঐতিহ্যময়।তাই ভারতীয় জনগণ অতি স্বচ্ছন্দে ইন্ডিয়ান,ভারতীয় অথবা হিন্দুস্তানী হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন।
১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত আমাদের প্রদেশটির নাম ছিলো পূর্ব বাংলা। অর্থাৎ মূল নাম এবং রাষ্ট্রীয় নামে কোন তফাৎ ছিলো না। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তা পরিবর্তন করে রাষ্ট্রীয় নাম পূর্ব পাকিস্তান করা হয়।
কিন্তু আবহমানকাল ধরে ভূখন্ডটি বাংলাভূমি নামেই পরিচিত। মোগল আমলের সুবে বাংলা, কবির কলমে বাংলাদেশ,গায়কের কন্ঠে প্রিয় বাংলাদেশ বার বার ধ্বনিত হয়েছে। তাই সেই সময় অর্থাৎ ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৭১ সালের যে কোন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নামটি ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই।