আজ সোমবার, ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সীমান্তের “যুদ্ধ”: ফেসবুকীয় ফ্যান্টাসি

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ২০, ২০২৫, ০৫:০১ পূর্বাহ্ণ
সীমান্তের “যুদ্ধ”: ফেসবুকীয় ফ্যান্টাসি

Sharing is caring!

সারাহ 

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ঘটনার শুরু যেন এক শান্ত দুপুরে। এক কৃষক তার ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে নিজের জমিতে ঘাস কাটতে যান। কিন্তু সমস্যা হলো, ছোট ছেলেরা এতটা বোঝার মতো বড় হয়নি। গমের চারা ঘাসের মতোই দেখতে! তারা পাশের জমিতে ঢুকে গম কাটতে শুরু করে। বিপত্তি বাঁধে তখনই, যখন দেখা যায় ওই গমের জমি আরেক ভারতীয় কৃষকের।
ভারতীয় কৃষক এই দুই ছেলেকে ধরে ফেলে। বাংলাদেশের কৃষক প্রাণপণে অনুনয়-বিনয় করেন, “ভাই, বাচ্চারা তো বুঝে না। ছেড়ে দেন।” কিন্তু ভারতীয় কৃষক ছেলেদের ছাড়তে নারাজ। হতভাগা কৃষক ছেলেদের ফিরে না পেয়ে বাড়ি ফিরে গিয়ে গ্রামে খবর দেন—“আমার দুই ছেলেকে ভারতের বিএসএফ ধরে নিয়ে মেরে ফেলেছে!”
এমন দুঃখজনক খবর শুনে পুরো গ্রামের মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা আসে, “জিহাদ শুরু হয়েছে। প্রস্তুত হন!” মুহূর্তেই গ্রামের মানুষ লাঠি, কোদাল, কাস্তে নিয়ে সীমান্তের দিকে ছুটে যায়।
গ্রামবাসী এতটাই উত্তেজিত যে তারা বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে ভারতে ঢুকে পড়ে। ভারতের বিএসএফ পরিস্থিতি সামাল দিতে সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে। এতে গ্রামের মানুষ কিছুটা পিছিয়ে আসে, কিন্তু দূর থেকে তারা “নারায়ে তদবির” স্লোগান দিতে থাকে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজিবি এবং বিএসএফ পতাকা বৈঠকের আয়োজন করে। আলোচনার পর আটকে রাখা দুই ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে ততক্ষণে গ্রামের অন্যান্য প্রান্ত থেকে আরও লোকজন এসে পৌঁছায়। পতাকা বৈঠকের পরও উত্তেজনা থামেনি। তারা বিএসএফকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি শুরু করে, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে থাকে।
এদিকে বাংলাদেশের এক কুখ্যাত ফেসবুক পেজ খবর প্রচার করে—“বাংলাদেশের কৃষক ও বিজিবি মিলে বীরত্বের সঙ্গে লড়ে ১৮ জন বিএসএফকে জাহান্নামে পাঠিয়েছে!” এই ভুয়া সংবাদ মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।
ভারতের গ্রামে খবর পৌঁছায়, আর গ্রামবাসী “জয় শ্রীরাম” স্লোগান দিতে দিতে সীমান্তের দিকে ছুটে আসে। পরিস্থিতি এমন যুদ্ধের আকার ধারণ করে, যেন কোনো আন্তর্জাতিক সংঘাত শুরু হতে যাচ্ছে।
ফেসবুকে এমন ভুয়া খবর ও সীমান্তে উত্তেজনা দেখে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ভারতের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে ব্যাখ্যা চান। ভারতের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়—“আমরা এসব বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা করতে পারি না। আমাদের নীতি স্পষ্ট: নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া আমরা কোনো চুক্তিতে যাব না।”
শেষ কথা:
এই ঘটনাটি কেবল একটি ভুল বোঝাবুঝি থেকে শুরু হয়েছিল। কিন্তু ফেসবুকের ভুয়া সংবাদ পরিস্থিতিকে এমন জায়গায় নিয়ে যায়, যেখানে দুই দেশের গ্রামবাসী একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত।
সীমান্তে সেদিন যা ঘটেছে, তা কেবল স্থানীয় উত্তেজনার গল্প নয়, এটি প্রযুক্তির অপব্যবহার এবং ভুয়া সংবাদের প্রভাবের একটি উদাহরণ। তবে বিজিবি-বিএসএফের ভূমিকা দেখে মনে হয়, তারা এই নাটকের প্রকৃত দর্শক, বিবিসির এক সাংবাদিকের প্রশ্নে বিজিবি  বলেছে তারা নিজেরাও জানেনা আসল ঘটনা কি।