আজ শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আনন্দ ভ্রমণে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের একদিন

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ
আনন্দ ভ্রমণে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের একদিন

Sharing is caring!

সালাহ্ উদ্দিন ইবনে শিহাব

মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের নবীন ও প্রবীন সাংবাদিকদের মেলবন্ধনে ২০২৫ সালের আনন্দ ভ্রমণ সম্পন্ন হলো। গতকাল (৩০ জানুয়ারি) শীতের কুয়াশাজড়ানো হিম সকালে মৌলভীবাজার থেকে রাজনগরের মাথিউড়া চা বাগানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন সাংবাদিকতার মূলধারার সংগঠন মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সদস্যরা।

 

সেখানে খেলাধুলা ও আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন তারা। সকালে ব্রেড-কলা আর ঘুম চোখে চা পান করে শুরু হয় দিনের আনন্দযজ্ঞ।
প্রথমেই সিলেট বিভাগের বর্ষীয়ান সাংবাদিক এম এ সালাম ফুটবল খেলা প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর ঝরাপাতায় আচ্ছাদিত মাঠের পাশে শুরু হয় ফুটবল প্রীতি ম্যাচ। সাংবাদিরা জুনিয়র, সিনিয়র ভাগে ভাগ হয়ে গ্রাম বাংলার সবচেয়ে উপভোগ্য খেলাটি শুরু করেন। এ সময় রেফারির ভূমিকা পালন করেন দৈনিক সমকালের জেলা প্রতিনিধি, সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ইসলাম। গ্যালারিহীন পত্রহীন গাছের নিচে বসে খেলা উপভোগ করেন অপেক্ষাকৃত সিনিয়র সাংবাদিকরা। খেলায় দুইপক্ষই সমানে সমান। ‘বিনাযুদ্ধে নাহি দেব সূচাগ্র মেদেনী’ এমন প্রত্যয়ে গোলহীন খেলা শেষ হয়। শেষে প্যানাল্টিতে একগোলে এগিয়ে যায় নবীনদের টিম। এমন আনন্দ উৎসবে সকলেই যেন স্মৃতিকাতর। পুরনো দিনের ফিরে যাওয়ার স্মৃতিতে সবাই উচ্ছ্বসিত গানে আর প্রাণে।
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ওমর ফারুক নাঈম যাবতীয় খেলাধুলার ব্যবস্থাপনায় ছিলেন এবং তাকে সহযোগিতা করেন প্রেসক্লাব সদস্য সাংবাদিক শাহনেওয়াজ চৌধুরী সুমন। ধারাবাহিক আনন্দ প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় ইভেন্ট ছিল ইনআউট বা ‘হশকর ঢিলকর’ খেলা। মাথিউড়া চা বাগানের ছায়াময়ী পত্রপল্লবহীন বৃক্ষরাজির ঝরাপাতায় মগ্ন রাস্তায় শুরু হয় এই অদ্ভূত খেলা। এ খেলায় সকলবয়েসীরা অংশ নেন। কিন্তু গত বছরের মতো এবারো বর্তমান প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম শেফুল সমকালের নূরুল ইসলামের প্রতি অভিযোগ আনেন বৈষম্যের। তিনি বলেন, ‘নূরুল আমাকে এবারও ইচ্ছা করে ডিসকোয়ালিফাইড করেছে। বাকিরা হাসিতে ফেটে পড়েন।
এ খেলা সম্পন্নের পর মাথিউড়া ফিশারিজ বাংলোয় শুরু হয় ঝুঁড়িতে বল নিক্ষেপ ও হাঁড়িভাঙা প্রতিযোগিতা। এই দুই প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগিতারা ঝুঁড়িতে বল নিক্ষেপ করতে পারলেও কেউই হাঁড়ি ভাঙতে পারেন নি। তবে হাটে হাঁড়ি ভাঙতে না পারলেও সাংবাদিক আব্দুর রব ও শাহনেওয়াজ চৌধুরী সুমনের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা ও খুনসুটি ছিল উপভোগ্য। এর মধ্যেই বাবুর্চি সেলিমের রান্না করা স্বাদের তরকারি ভক্ষণের ডাক পড়ে। মাগুর মাছের সাথে শীম বীচি, টেংরা মাছ দিয়ে টমেটো আর কক মোরগ, আলু ভর্তা ক্ষুধার্ত সাংবাদিকদের রসনা জুড়ায়।
মাথিউড়া চা বাগানে ভ্রমণের পূর্বে স্থান নির্ধারণ ও ভ্রমণের যাবতীয় সুযোগ নিশ্চিত করেন সিনিয়র সাংবাদিক মো. আব্দুল আজিজ ও আমার দেশ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ফরহাদ আহমদ। পুরো ভ্রমণজুড়ে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সঙ্গ দিয়েছেন রাজনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি আউয়াল কালাম বেগ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান সুহেল। এছাড়া বাগান ম্যানেজার ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বাংলোয় অবস্থানের সুযোগ করে দেন এবং আগত প্রত্যেক সাংবাদিককে এক প্যাকেট করে চা পাতা উপহার দেন।
শেষ পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে মারিফতি গান ‘পাক পানি চিনিয়া নাও বাইও/ হায়রে আমার হাউসের নাইয়া’ গান পরিবেশন করেন মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি, সিনিয়র সাংবাদিক সরওয়ার আহমদ। বয়সের পড়ন্ত বেলায় উপনীত এই সাংবাদিকের গানে উপস্থিত সাংবাদিকরা ছিল প্রাণের উচ্ছ¡লতায় ভরপুর। তারা তালি দিয়ে দিয়ে পুরো অনুষ্ঠানকে মাতিয়ে তুলেন। এর আগে সুনীলের বিখ্যাত কবিতা তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি আবৃত্তি করেন দেশটিভির সাংবাদিক সালেহ এলাহি কুটি ও কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার প্রথামাংশ আবৃত্তি করেন সাংবাদিক সালাহ্ উদ্দিন ইবনে শিহাব। পরে বিজয়ীদের মধ্যে খেলাধুলা ও র‌্যাফেল ড্র এর পুরস্কার বিতরণ করেন প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ।
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি সাংবাদিক সরওয়ার আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শেফুলের নেতৃত্বে আনন্দ ভ্রমণে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক সৈয়দ মহসিন পারভেজ, মৌসুফ এ চৌধুরী, শ. ই সরকার জবলু, মাসুদ আহমদ, মামুনুর রশিদ মহসিন, সাংবাদিক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, আফরোজ আহমদ, হোসাইন আহমদ, সৈয়দ বয়তুল আলী, পুলক পুরকায়স্থ, জুলফিকার আলী ভূট্টো, মো. আমির, আবুল হায়দার মো. তরিক, মো. আশরাফ আলী, এম এ কাইয়ুম সুলতান, অলী আহমদ মাহিন, আব্দুল আজিজ রিয়াদ, রাজন আহমদ তৌফিক, রিপন মিয়া প্রমুখ।