আজ মঙ্গলবার, ৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাটোরে পত্রিকা সম্পাদকের হাত ভেঙ্গে দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ৬, ২০২৫, ০৩:১৭ অপরাহ্ণ
নাটোরে পত্রিকা সম্পাদকের হাত ভেঙ্গে দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা

Sharing is caring!

টাইমস নিউজ

নাটোর সদর উপজেলার চন্দ্রকোলা বাজারে নাটোর থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার সম্পাদক ও কলেজশিক্ষককে মারধর করে দুই হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে। তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে এই ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ওই সম্পাদকের নাম সাজেদুর রহমান সেলিম। তার পত্রিকার নাম দৈনিক প্রান্তজন। তিনি নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের পণ্ডিতগ্রাম এলাকার বাসিন্দা এবং চন্দ্রকোলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক।

এ ঘটনায় আব্দুল ওহাব নামে অভিযুক্ত এক বিএনপিকর্মীকে তার নিজ বাড়ি চন্দ্রকোলা পূর্বপাড়া এলাকা থেকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।

নাটোর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পলাশ কুমার সাহা জানান, গুরুতর আহত সেলিমকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং মারপিটে তার বাঁ হাত ভেঙে গেছে।

জানা গেছে, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার ২০০৮ সালে ওই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। অধ্যক্ষর দায়িত্বে রয়েছেন আহাদ আলী সরকারের মেয়ে রোখসানা পারভীন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কলেজটির নামফলক থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বাদ দিয়ে রাখা হয় চন্দ্রকলা ডিগ্রি কলেজ। এরপর ওই কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতারা দ্বিধাবিভক্ত হলে অধ্যক্ষের কাছের ব্যক্তি সেলিমও এক পক্ষের বিরাগভাজন হন।

রবিবার দুপুরে ক্লাস শেষে সাজেদুর রহমান সেলিম বাড়ি ফিরছিলেন। পাশেই চন্দ্রকোলা বাজারে ৮-১০ জন যুবক সেলিমকে থামায়। এরপর তারা পাশের চায়ের দোকানে ডেকে নিয়ে লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। খবর পেয়ে কলেজের এক সহকর্মী সেলিমকে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সাজেদুর রহমান সেলিম বলেন, ‘কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিএনপির সন্ত্রাসীরা আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের ভেতরে একজনকে চিনতে পেরেছি, তার নাম ওহাব। সে স্থানীয় বিএনপির কর্মী। তারা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। কলেজে কমিটি নিয়ে ঝামেলায় বিএনপির একটা পক্ষ আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করছিল। অথচ কমিটির বিষয়ে তো আমার কিছু করার নেই।’

সেলিমের পরিবারের দাবি, স্থানীয় বিএনপিকর্মী আব্দুল ওহাব ও তার সহযোগীরা এই ঘটনায় জড়িত।

এ ব্যাপারে জানতে আব্দুল ওহাবের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ বলেন, ‘কেউ যদি অপরাধ করে তার জন্য আইন আছে। কোনও মারধরকেই আমরা সমর্থন করি না। দলের কেউ এ ঘটনায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনা জানার পর সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখন গর্যন্ত কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাওয়ামাত্রই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অপরদিকে, এ খবর পেয়ে নাটোর ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি সুফি সান্টু, সিনিয়র সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মুক্তার হোসেনসহ অন্যরা, নাটোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা হাসপাতালে ছুটে যান। তারা সাজেদুর রহমান সেলিমের ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এ ছাড়াও ঢাকার নাটোর জেলা সাংবাদিক সমিতি (নাজেসাস) এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। নাজেসাসের পক্ষে এ দাবি জানান নাটোর জেলা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক শামছুল ইসলাম।