আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যে বারবার সমালোচনা ; চিরতরে এই কালিমা মুছে ফেলার দৃঢ় প্রত্যয় নতুন উপাচার্যের

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২২, ২০২৪, ০৩:১২ অপরাহ্ণ
শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যে বারবার সমালোচনা ; চিরতরে এই কালিমা মুছে ফেলার দৃঢ় প্রত্যয় নতুন উপাচার্যের

Sharing is caring!

আবির হোসেন, ইবি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ৪৫ বছর পূর্ণ করে ৪৬ বছরে পা দিয়েছে। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার শান্তিডাঙ্গার দুলালপুরে যাত্রা শুরু করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ। দীর্ঘ এ পথচলায় প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রয়েছে নানাবিধ অবদান। তবে প্রত্যাশা-প্রাপ্তির সমীকরণে অপ্রাপ্তির তালিকাই দীর্ঘ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য। শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যে গণমাধ্যমে নেতিবাচক শিরোনামের কারণে প্রতিষ্ঠানটি হয়েছে ব্যাপক সমালোচিত। শিক্ষার মান নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের এই কলঙ্ক থেকে বিগত ২০ বছরে কোনো উপাচার্যই বের হতে পারেননি। এই কালো তকমা নিয়ে বিভিন্ন সময় মেয়াদ পূর্ণ না করে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে সাবেক বেশ কয়েকজন উপাচার্যের। তবে নতুন উপাচার্য এই কলঙ্কের কালিমা চিরতরে মুছে ফেলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
জানা যায়, ২০০৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম অষ্টম উপাচার্য হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু হয়। পরবর্তী দুই বছরে তা এমন মাত্রায় পৌঁছায় যে সর্বশেষ নিয়োগ দেওয়ার পর তাকে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতে হয়। ২০০৯ সালে দশম উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আলাউদ্দিন ও প্রথম উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন দায়িত্ব পেলে তাদের বিরুদ্ধেও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে তদন্ত কমিটি এসে রিপোর্ট দিলে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই অব্যাহতি পান তারা। ২০১২ সালে একাদশ উপাচার্য হিসেবে যোগ দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিমও একই দোষে দুষ্ট হলে মেয়াদ পূর্তির আগেই ২০১৬ সালে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে ২০১৬ সালে ১২তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রাশিদ আসকারীর সময়কালে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে তিন দফায় নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। প্রমাণিত হলে বেশ কয়েক শিক্ষককে তিনি শাস্তির আওতায় আনলেও তা বন্ধ হয়নি। পরবর্তীতে দণ্ডপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও ফের নিয়োগ বাণিজ্য কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালামের সময়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রার্থীর সঙ্গে উপাচার্যের একাধিক ফোনালাপ ফাঁস হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরাও বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানায়। কর্মকর্তারা উপাচার্যের নিয়োগ বাণিজ্যের? অডিও প্রশাসন ভবনের সামনে মাইকে বাজালে তা দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচিত হয়। পরে ছাত্র জনতার আন্দোলন পরবর্তী সময়ে মেয়াদ পূর্ণ না করেই পদত্যাগ করেন তিনি।
পরবর্তীতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। দায়িত্ব গ্রহণের পরেই তিনি দুর্ণীতির বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ বাণিজ্যের এই কালো দাগ চিরতরে মুছে ফেলার আশ্বাস দিয়েছেন। এরআগেও বিভিন্ন উপাচার্যরা নিয়োগের পরেই একই বক্তব্য দিলেও পরবর্তীতে তারা নিজেরাই এই কালিমা গায়ে মেখেছেন। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিষ্ঠার সঙ্গে উপাচার্য দায়িত্ব পালন করলেই শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের কলঙ্ক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি মুক্তি পাবে বলে মনে করছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, বিগত সময়ের সকল শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি নিজে কোনো দুর্ণীতি করবো না, কাউকে করতেও দেব না। ছাত্র জনতার আন্দোলন পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের স্পিরিটকে ধরে রেখে আমরা কাজ করবো। আগামী দিনে কোনো রাজনৈতিক ব্রাকগ্রাউন্ড দেখে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে না। শিক্ষক হবে ব্যান্ডিং, মেধার ভিত্তিতে ও অধিকতর যোগ্য। সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা পেলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দুর্ণীতি থাকবে না।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৮টি অনুষদের অধীন ৩৬টি বিভাগে ১৬ হাজার ৬৭৮ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। এর মধ্যে ছাত্র ৯ হাজার ২২৬ এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৪৫২ জন। সর্বমোট জনবল, শিক্ষক ৪০৬ এবং কর্মকর্তা ৪৮৮, সহায়ক কর্মচারী ১০২ এবং সাধারণ কর্মচারী ১৪৯ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ৬২৪ জনকে পিএইচডি এবং ৭৮৮ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করেছে। বর্তমানে ১৬৪ জন পিএইচডি এবং ৪৭ জন এমফিল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন।