আজ বুধবার, ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাওলানা হাসরাত মোহানি ও ইনকিলাব জিন্দাবাদ

editor
প্রকাশিত মার্চ ৫, ২০২৫, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ণ
মাওলানা হাসরাত মোহানি ও  ইনকিলাব জিন্দাবাদ

Sharing is caring!

সৌমিত্র দেব

কমিউনিস্টরা দল ছেড়ে দিলেও তার স্বকীয়তা ছাড়তে পারে না । মতিয়া চৌধুরী , নূরুল ইসলাম নাহিদেরা আওয়ামী লীগ করলেও অনেকেই এখনো তাদেরকে কমিউনিস্ট নামেই চেনেন। ব্যতিক্রম ও আছে । যেমন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আমাকে বলেছিলেন , দীর্ঘদিন বাম রাজনীতি করলেও তাঁর জীবন যাপন কোনদিন কমিউনিস্টদের মতো ছিল না।

 

আবার মান্নান ভুঁইয়া বলেছিলেন অন্য কথা । ছাত্র রাজনীতির পরে তিনি নরসিংদী এলাকায় প্রকাশ্যে ভাসানী ন্যাপ করতেন আর গোপনে গড়ে তুলেছিলেন কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সমন্বয় কমিটি । ওয়ান ইলেভেনের সময় তাঁর গুলশানের বাড়িতে দীর্ঘ আড্ডা দিয়েছিলাম আমি আর সহকর্মী কাজী আদর আপা। বিএনপির মহাসচিব হিসেবে পরিচিত মান্নান ভুঁইয়া তখন সংস্কারপন্থীর তকমা পেয়েছেন । এক দশকের এই সফল মহাসচিবকে বিএনপি আর সেভাবে স্মরণ করে না । সে যাই হোক, বিএনপি রাজনীতির প্রভাবশালী এই নেতা বলেন, ডানপন্থী বিএনপি শুরু থেকেই কমিউনিস্টদের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে। বিশেষ করে মহাসচিব পদটি কমিউনিস্টদের জন্য সংরক্ষিত । তালিকাটি খেয়াল করলে দেখা যাবে তিনি মিথ্যা বলেন নি । সালাম তালুকদার, খন্দকার দেলোয়ার থেকে শুরু করে মির্জা ফখ্রুল পর্যন্ত সকল মহাসচিব একসময় কমিউনিস্ট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । মান্নান ভুঁইয়া বলেছেন , এই ধারার সর্বশেষ প্রতিনিধি হবেন শামসুজ্জামান দুদু ।কারণ দুদুর হাতেখড়ি হয়েছিল বাম রাজনীতিতে ।

 

 

ষাটের দশকে মস্কোপন্থী কমিউনিস্টরা আওয়ামী রাজনীতির লেজুড় হয়ে জয়বাংলার নৌকায় উড়িয়ে দিয়েছিল সমাজতন্ত্রের লাল পাল খানা ।

 

অন্যদিকে সম্প্রতি সাবেক কমিউনিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য মোল্লাতন্ত্রের লেজুড় হয়েও মোল্লাদের মুখে তুলে দিয়েছেন  সেই  বিগত শতকের বিশের দশক ত্থেকে শুরু করে ১৯৪৮ সালে দেয়া কমিউনিস্ট পার্টির শ্লোগান – ইনকিলাব জিন্দাবাদ ।

উইকি পিডিয়ার মতে, এই স্লোগানটি ১৯২১ সালে উর্দু কবি, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা হাসরাত মোহানি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়। তিনি বিভিন্ন সময় কংগ্রেস  ও মুসলিম লীগের রাজনীতিও করেছেন।

তাঁর প্রকৃত নাম সৈয়দ ফজল-উল-হাসান ছিলো। হযরত তার সাহিত্যিক নাম যা তিনি উর্দু কবিতায় ব্যবহার করতেন। আর শব্দ মোহানি হচ্ছে যেখানে তিনি জন্মগ্রহণ করেন মোহনের স্থানীয় জায়গা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯২১ সালে তিনি “ইনকিলাব জিন্দাবাদ” শব্দটি স্লোগান হিসেবে সৃষ্টি করেন। তিনি ছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির চারজন প্রতিষ্ঠাতার একজন। তাঁর রচিত বিখ্যাত উর্দু গান চুপকে চুপকে রাত দিন আশু বাহানা আজো  মশহুর হয়ে আছে ।

ইনকিলাব আরবী শব্দ। এর অর্থ বিপ্লব। জিন্দাবাদ উর্দু শব্দ। এর অর্থ – দীর্ঘজীবী হোক।  ইনকিলাব জিন্দাবাদ   মানে  বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।

 

এটি বিপ্লবী ভগত সিং (১৯০৭-১৯৩১) দ্বারা ১৯২০ এর দশকের শেষের দিকে তার বক্তৃতা এবং লেখার মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়েছিল। এটি হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের অফিসিয়াল স্লোগানও ছিল, এবং কমিউনিস্ট একত্রীকরণের স্লোগানের পাশাপাশি অল ইন্ডিয়া আজাদ মুসলিম কনফারেন্সের একটি স্লোগান।

 

 

১৯২৯ সালের এপ্রিলে, এই স্লোগানটি ভগৎ সিং এবং তার সহযোগী বটুকেশ্বর দত্ত দ্বারা উত্থাপিত হয়েছিল, যিনি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় আইনসভায় বোমা হামলার পরে এই স্লোগান দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে, প্রথমবারের মতো একটি উন্মুক্ত আদালতে, এই স্লোগানটি ১৯২৯ সালের জুন মাসে দিল্লির হাইকোর্টে তাদের যৌথ বিবৃতির অংশ হিসাবে উত্থাপিত হয়েছিল।

 

তারপর থেকে, এটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম র‌্যালিতে পরিণত হয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের দীর্ঘস্থায়ী ভারতীয় রাজনৈতিক উপন্যাসগুলোতে, স্বাধীনতার পক্ষের অনুভূতি প্রায়শই এই স্লোগানে চিৎকার করে চরিত্রগুলির দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

 

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্টার পর কমিউনিস্ট পার্টি শ্লোগান দেয়- ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়, ইনকিলাব জিন্দাবাদ । পাকিস্তানের শাসক গোষ্টি এই শ্লোগানে অস্বস্তি বোধ করে এবং কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে । কমিউনিস্টরা তখন থেকেই আওয়ামীলীগের ভেতরে ঢুকে কাজ শুরু করেন । সেই শ্লোগান এবার ধারণ করেছেন ২০২৪  সালের লাল বিপ্লবীরা ।