Sharing is caring!
সালেহ আহমদ (স’লিপক):
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মৌলভীবাজারের কিশোর কাইরান কাজী মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিশ্বের শীর্ষধনী ইলন মাস্কের মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছেন। স্পেসএক্স-এর ‘প্রযুক্তিগতভাবে চ্যালেঞ্জিং কিন্তু মজার’ সাক্ষাৎকার পর্ব সফলভাবেই উৎরে গিয়েছেন কাইরান। সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পরপরই তিনি ২০২৩ সালের জুন মাসে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ শুরু করেন।
স্পেসএক্স-এর স্টারলিংক টিমে যোগদানের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত কাইরান লিংকডইনে লিখেছিলেন, তিনি ‘বিশ্বের সবচেয়ে সেরা কোম্পানির’ স্টারলিংক ইঞ্জিনিয়ারিং টিমে যোগ দিতে যাচ্ছেন। কাইরান আরও লিখেন, স্পেসএক্স সেই সব বিরল কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি, যারা কিনা তার বয়সের মতো পুরনো মানদন্ড দিয়ে তার সক্ষমতা ও পরিপক্কতা বিবেচনা করেনি। উল্লেখ্য যে, স্টারলিংক স্পেসএক্স-এর স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।
কাইরানের মা জুলিয়া চৌধুরী কাজী ওয়াল স্ট্রিটের একজন কর্মী। তিনি ছেলেকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর বে এলাকায় থাকেন। জুলিয়া চৌধুরী কাজীর বাড়ি বাংলাদেশের মৌলভীবাজারে। কাইরানের বাবা মুস্তাহিদ কাজী যুক্তরাষ্ট্রে একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলায়।
জানা যায়, কাইরান ও তাঁর মা জুলিয়া চৌধুরী কাজী ক্যালিফর্নিয়ার প্লিজানটন থেকে ওয়াশিংটনের রেডমন্ডে স্থানান্তরিত হয়েছেন। কেননা, কাইরানের অফিস রেডমন্ডে।
বিস্ময় কিশোর কাইরানের মা মৌলভীবাজার জেলা শহরের চৌমুহনীস্থ জুলিয়া শপিং সিটির স্বত্ত্বাধিকারী। কাইরানের নামে তার নানা এডভোকেট গজনফর আলী চৌধুরী মৌলভীবাজার শহরে প্রতিষ্ঠা করেছেন কাইরান রেস্টুরেন্ট।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক, এডভোকেট গজনফর আলী চৌধুরী ছিলেন ষাটের দশকে দক্ষিণ সিলেটের বরেণ্য ন্যাপ নেতা। গজনফর আলী চৌধুরী ও সৈয়দা হাসনা বেগম দম্পতির হাত ধরে নব্বইয়ের দশকে দৈনিক সংবাদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশ শুরু হয়। কাইরানের নানি ষাটের দশকের ছাত্রনেত্রী ও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি সৈয়দা হাসনা বেগম চৌধুরী।
কাইরান ১১ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শুরু করে। ২০২৩ সালে গ্র্যাজুয়েট হয়ে একেবারে চাকরিতে ঢুকে যান। তার আশা, মানুষের মঙ্গল অভিযানে নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি খাটিয়ে বিশেষ ছাপ রাখতে পারবেন তিনি।
কাইরানের বাবা-মা জানিয়েছেন, ছোট থেকেই বিশ্বের নানা বিষয়ে কৌতূহল কাইরানের। দু’বছর বয়সের মধ্যেই পুরো বাক্যে কথা বলতে পারত সে। সে যখন থার্ড গ্রেডে পড়ে তখন সে বাড়িতে জানায় যে, স্কুলের পাঠ্যক্রম তার খুব সহজ লাগছে। তারপরই তাকে কমিউনিটি কলেজে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেন তার বাবা-মা।
কাইরান অবসর সময়ে ঐতিহাসিক ঘটনার ছায়ায় তৈরি কম্পিউটার গেম খেলতে ভালবাসেন। বই পড়ার ক্ষেত্রে কল্পবিজ্ঞানের পোকা। তার প্রিয় লেখক ফিলিপ কে ডিক। সাংবাদিকদের মধ্যে তার প্রিয় অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ মাইকেল লুইস। কাইরান ইন্টেন ল্যাবসা’তে একজন এআই রিসার্চ কো-অপ ফেলো হিসেবে ইন্টার্নশিপ করেন এবং মাত্র ১১ বছর বয়সে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হন।
কাইরান কাজীর লিংকডইন প্রোফাইল অনুসারে, গত বছর ব্ল্যাকবার্ড ডট এআই নামের এক সাইবার ইন্টেলিজেন্স ফার্মে চার মাস মেশিন লার্নিংয়ের ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করেন। সেখানে তিনি সামাজিক মাধ্যমের আধেয় ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা শনাক্তের পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি তৈরি করেন।