আজ বৃহস্পতিবার, ২রা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফরহাদ মজহার কেন গৃহযুদ্ধ দেখছেন

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৫:০৫ অপরাহ্ণ
ফরহাদ মজহার কেন গৃহযুদ্ধ দেখছেন

Sharing is caring!

পুলক ঘটক

জার্মান সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলে বুদ্ধিজীবী   ফরহাদ মজহারের একটি লম্বা সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। সেখানে মতলবী পণ্ডিতের ছন্নছাড়া স্ববিরোধী বক্তব্যের চুড়ান্ত লাইন, “আগামী দিনে চোখের সামনে একটা গৃহযুদ্ধ দেখতে পাচ্ছি।”
বিপ্লবীদের ক্ষমতা চুড়ান্ত ও অসীম করার জন্য তিনি গৃহযুদ্ধ চান। তিনি সংবিধানকে “সমস্যা” মনে করছেন। তার বদলে বদলে “গঠনতন্ত্র” লাগবে। তবে ‘সংবিধান’ না বলে ‘গঠনতন্ত্র’ বললে দেশের কী কী উপকার হবে বুঝিনি। এতটুকু বুঝেছি, গঠনতন্ত্রে বিপ্লবীদের জবাবদিহিতার ঝামেলা থাকবে না।
তার মতে, আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী এবং বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও ফ্যাসিবাদী। শুধু এখনকার “বিপ্লবী” ছাত্রদের দ্বারা রাজনৈতিক দল হলে ঠিক আছে!
রাজনৈতিক দলগুলোর বার্গেইনিং, গণমাধ্যমের প্রশ্ন, বা যে কোনো প্রকর জবাবদিহিতাকে তিনি সমস্যা মনে করছেন। গণমাধ্যমও ফ্যাসিবাদী, কারণ প্রশ্ন করে।
তার মতে সংবিধানের আওতায় শপথ নিয়ে সরকার সংবিধানের অধিনস্ত হওয়ায় বিপ্লব হাতছাড়া হয়ে গেছে। “সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব” হয়েছে।
“আমি এটাকে সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব বলছি। আইনের কথা বলে জনগণের অভিপ্রায়কে নস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে।”
মোটকথা, ফরহাদ মজহার চাচ্ছেন, তাঁর পার্টনার ফরিদা, কতিপয় সাগরেদ ও ড. ইউনুসের সরকারের ক্ষমতা ও কর্মকাণ্ড আইনের ঊর্দ্ধে থাকতে হবে। তাদের ক্ষেত্রে কোনো আইন বা কোনো প্রকার সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা চলবে না। এদের ক্ষমতায় আইনগত সীমাবদ্ধতা থাকলে জনগণের ক্ষমতাই সীমাবদ্ধ বিবেচিত হবে। এরাই এখন জনগণ! জনগণ তাদের ক্ষমতা নিঃশেষে এদের হাতে অর্পন করেছে। সুতরাং এদের আবার জবাবদিহি কিসের?
তিনি মনে করেন সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা উচ্ছেদ করতে পারলে তারা “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র” গড়ে তুলতে পারতেন। কেমন সে গণতন্ত্র, যা জবাবদিহিতার ঊর্দ্ধে? এমন মতলবি মতবাদ ওনার মেধাবী শিষ্যদের কাছ ছাড়া আমাদের মতো আমজনতার বুদ্ধির অগম্য।
এমনকি তিনি নির্বাচনেরও বিরুদ্ধে। স্পষ্ট বলেছেন, “ভোট কী? ভোট তো ফ্যাসিস্ট সংবিধানের।”
তার ভাষায় “তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) জনগণের রক্ত দিয়ে নির্বাচিত। বর্তমান সরকার রক্তের বিনিময়ে জনগণের অভিপ্রায়ে দায়িত্ব নিয়েছে। আর কী, আর কীভাবে নির্বাচিত হবে?”
ড. ইউনুসের বিপ্লবী সরকারের ক্ষমতা অসীম হয়নি, সংবিধানের অধীন হয়েছে, বাধাহীন হয়নি, রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের মুখে পড়ছে বলে সাক্ষাৎকার জুড়ে আপশোস করেছেন তিনি। তার ভাষায় “সরকার ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলের কাছে নতজানু হয়ে গেছে, পরাজিত হয়ে গেছে।”
“সবগুলো নস্যাৎ করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। আমরা সম্পূর্ণ বিজয় করতে পারিনি। রাজনৈতিক দলগুলো গণঅভ্যুত্থানের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে।”
সংবিধান ফেলে দিয়ে নতুন “গঠনতন্ত্র” প্রণয়ন এবং বিপ্লবী সরকারের কার্যক্রমের বৈধতা দিতে গণভোট আয়োজনেরও বিরুদ্ধে তিনি।
বলেছেন, “কেন গণভোট হবে? গণভোট করে কি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে?”
তিনি আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থারও বিরুদ্ধে। তার বদলে তিনি মব ট্রায়ালের পক্ষে।
বলেছেন, “গণহত্যার বিচার ফ্যাসিস্ট সরকারের আইনে হচ্ছে। ওই আইনে জামায়াত নেতাদের ঝুলানো হয়েছে…… আপনি যদি সেই একই আইনে বিচার করেন, তাহলে আন্তর্জাতিক আইনের দিক থেকে এটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। জনগণকে যদি ক্ষমতা দিতেন, তাহলে জনগণ সংক্ষিপ্ত আদালতে বিচার করে রায় দিয়ে দিতো।”
বর্তমান সরকার ও বিপ্লবীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে তিনি ফ্যাসিবাদ বলেছেন। প্রশ্নকর্তা সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “আপনিও ফ্যাসিবাদী। গণমাধ্যম যেভাবে প্রশ্ন তোলে সেটা ফ্যাসিজমের আরেকটি প্রকাশ মাত্র৷”
গৃহযুদ্ধের পথ দেখিয়ে বলেছেন “আগামী দিনে আরেকটা লড়াই হবে। আপনি এড়াতে পারবেন না।”
সাক্ষাৎকারে একাধিকবার তিনি গৃহযুদ্ধের কথা বলেছেন।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ঊর্দ্ধে ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতার প্রয়োজনে তাঁর বক্তব্য, “অবিলম্বে তাদের পূর্ণ ক্ষমতা দেয়া হোক। সংবিধান বাতিল করা হোক। চুপ্পুকে সরিয়ে দেয়া হোক। .. সে প্রক্রিয়া তো এরা পারবে না। সেটা তো আমি আপনি করবো।”
এ পর্যায়ে সাংবাদিকের প্রশ্ন: “সেজন্যই কি আপনি গৃহযুদ্ধের কথা বলছেন?”
জবাব: “নিশ্চয়ই। সেদিকেই তো যাচ্ছে।”