আজ রবিবার, ৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন পাঠ্যবইয়ে যে সব অসংগতি

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ৩, ২০২৫, ০৫:৪১ পূর্বাহ্ণ
নতুন পাঠ্যবইয়ে  যে সব অসংগতি

Sharing is caring!

টাইমস নিউজ

 

নতুন পাঠ্যবইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের তালিকায় ‘নাহিয়ান’ নামে একজনের নাম পাওয়া যায়। তবে আন্দোলনে শহিদের তালিকায় ওই নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডর (এনসিটিবি) ওয়েবসাইটে দেওয়া পাঠ্যবইয়ের অনলাইন সংস্করণে পরে ভুলটি সংশোধন করা হয়। নাহিয়ান বাদ দিয়ে ‘নাফিসা’ দেওয়া হয়।

এখনো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিপুলসংখ্যক বই ছাপার কাজ শেষ করতে পারেনি এনসিটিবি। ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার রেওয়াজ শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। সব না হলেও কিছু বই বছরের প্রথম দিনই উঠত শিক্ষার্থীদের হাতে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান গত বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৪৪১টি বই পরিমার্জন করা হয়েছে। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে বইগুলোর অনলাইন ভার্সন পাওয়া যাবে আজ (বুধবার) থেকেই। ৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিকের বাকি সব বই ও মাধ্যমিকের ৮টি বই পৌঁছে যাবে শিক্ষার্থীদের হাতে। এছাড়াও ১০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের দশম শ্রেণির বই ও ২০ তারিখের মধ্যে সকল শ্রেণির বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে। ৪১ কোটির মধ্যে ৬ কোটি বই দেওয়া হয়ে গেছে এবং আরও ৪ কোটি বই দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও এসময় জানান তিনি। একই অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ঠিক সময়ে বই দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে সারা দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিতে না পেরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে আমরা আন্তরিক দুঃখিত।

বই হাতে পাওয়ার পর বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। স্থান পেয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয় ও নতুন কিছু গল্প, কবিতা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’-এ ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক প্রবন্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ছবি যুক্ত করা হয়েছে। ছাপা বইয়ে কয়েকজন শহিদের নামের সঙ্গে ‘নাহিয়ান’ নামে একজনও রয়েছে। তবে এই নামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কেউ শহিদ হয়েছেন বলে কারও জানা নেই। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া পাঠ্যবইয়ের অনলাইন সংস্করণে পরে ভুলটি সংশোধন করে নাহিয়ান বাদ দিয়ে ‘নাফিসা’ নামটি যুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান, ২০২৪-এর অভ্যুত্থান হয়েছে। এগুলোও বইয়ে থাকবে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, মুক্তিযুদ্ধকে আপনি কোণঠাসা করে অন্য কোনো ঘটনাকে বড় করে দেখাবেন। তাহলে আমাদের এই প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানবে না। তারা বিভ্রান্ত হবে।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘অতীতের সরকারগুলো ইতিহাস বিকৃত করেছে। এই সরকারও যদি সেই পথে হাঁটে, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তাহলে আবারো পরির্তন করতে হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইতিহাস হয় না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোনো কিছু করলে তা টিকবে না।’

এ কে এম রিয়াজুল হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এটা একেবারে নতুন বই নয়, পরিমার্জন করা হয়েছে। খুব বেশি পরিবর্তন করা হয়নি। যারা এটা করেছেন, তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ আরও অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন। তারা অল্প সময়ে এই কাজ করেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব ছিল না। তবে এটা নিয়ে আরো আলোচনা হবে। আরো কাজ হবে ভবিষ্যতে।’