টাইমস নিউজ
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে বাদ যাচ্ছে ৪৯ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ। ৫০ বছরের মধ্যে এত বরাদ্দ কমাতে কখনো হয়নি। এমনকি করোনা মহামারির সময়েও কমাতে হয়েছে এর চেয়ে অনেক কম। এ অবস্থার নেপথ্যে রয়েছে প্রধানত ৫টি কারণ।
কারণগুলো হলো- আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় না করা, অন্তর্বর্তী সরকারের কড়াকড়ি, অদক্ষতায় সময়মতো কাজ করতে না পারা এবং পুরোনো সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন সেক্টর, মন্ত্রণালয় এবং প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দ ভাগবাঁটোয়ারার কাজ করছে পরিকল্পনা কমিশন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এ অর্থবছরে আমরা চাইছি এডিপি ছোট থাকুক। কেননা অনেক বড় বরাদ্দ দিয়ে ব্যয় করতে না পারলে সেটি ভালো দেখায় না। সেই সঙ্গে এবার বাজেট ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আসছে। আগে থেকেই রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় ঘাটতি বেশি রেখে বরাদ্দ দেওয়া হবে না। কেননা বেশি ঘাটতি হলে মূল্যস্ফীতি হতে পারে। আগামী সপ্তাহে সংশোধিত এডিপি নিয়ে বৈঠক করব। সেখানে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। তবে এবার বড় অঙ্কের বরাদ্দ কমবে, এ কথা বলতে পারি।
এদিকে চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) এডিপি বাস্তবায়নেও বিরাজ করছে করুণদশা। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও গত ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের এক শতাংশ অর্থও খরচ করতে পারেনি। এগুলো হলো-স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া ১৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার এখনো ১০ শতাংশের নিচেই রয়েছে। সার্বিকভাবে এডিপির বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৫৩, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ০৬ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, কেন এত কম বাস্তবায়ন হয়েছে, সে বিষয়ে এখনো কিছুই বলা যাচ্ছে না। কারণ, আপনারা জানেন প্রতিবছরই এপ্রিল, মে, জুনে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে। সুতরাং তখন যে বাস্তবায়ন হার বাড়বে না, সেটি কে বলতে পারে? এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংশোধিত এডিপি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ ছাড়া)। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ১ লাখ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ফলে বরাদ্দ কাটছাঁট হচ্ছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ দেওয়া হবে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৮১ হাজার কোটি টাকা। এ বরাদ্দ দিয়ে শীঘ্রই সেক্টর, মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দ নির্ধারণে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করবে পরিকল্পনা কমিশন।
অর্থনৈতিক সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভাপতি ড. কেএএস মুর্শিদ বলেন, অর্থ সংকট তো রয়েছেই। এছাড়া কোথায় কোথায় কাটছাঁট করা হচ্ছে, সেটি দেখতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বরাদ্দ কমালে এর একটি প্রভাব তো অবশ্যই পড়বে। তবে এর বিস্তারিত না দেখে এখনই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু আমরা প্রত্যাশা করব-সংশোধিত এডিপির যেন আবার সংশোধন করতে না হয়। কেটেছেঁটে যা বরাদ্দ দেওয়া হবে, তার যেন শতভাগ বাস্তবায়ন হয়।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com
Copyright © 2025 RED TIMES. All rights reserved.