Sharing is caring!
শামীম আজাদ
আমি ‘ শামীম’কারো কারো মামীমা হলেও শামীমা নই। বিবাহের আগে আমি পরিচিত ছিলাম বাবার পদবীতে। ছিলাম শামীম তরফদার আর ১৯৭২ সালে আবুল কালাম আজাদের সংগে বিবাহের পর হলাম শামীম আজাদ নামে। দুটো পদবীর আগে ঐ শামীম, শামীমা নয় বলেই ধারনা করি আমাকে নারী না পুরুষ তা সনাক্ত করার উপায় ছিল না। বরং আমাকে দেখার আগে সব সম্পাদক পুরুষই ভেবেছেন বলে আমি হয়তো আমার লেখা যাচাই বাছাইয়ে নায্যতা পেয়েছি।
আমি আশির দশকে আজাদ নামেই পরিচিত কবি হয়ে যাবার পর একদিন কবি রফিক আজাদ তাঁর রোববার অফিসে হাসতে হাসতে বলেন, লোকে জিজ্ঞেস করে ‘ শামীম আজাদ আপনার কিছু হন?’ আমি বলেছে, ‘শামীম আজাদ আমার ভাই’! হা হা হা । বলা বাহুল্য সে সাহিত্য দশক রফিক আজাদ, আলাউদ্দিন আল আজাদ, হুমায়ূন আজাদ, হালিম আজাদ ছিল আজাদে আজাদে ভরা। সুতরাং লেখার ধাচে বা শৈলীতে যেহেতু বোঝা যায় না তাই আমি আজাদও পুরুষই হব! নারীর পরিচিত নাম থাকলে হয়তো আমার লেখা বৈষম্যের শিকার হত। যেভাবে সব নারী লেখকরা হন। যেভাবে আমি দৃশ্যমান হবার পর সে বিবেচনায় পিছিয়ে গেলাম। নারী কবি হয়ে গেলাম।
একটা গল্প বলেই মূল কথায় ফিরে আসছি। আশি দশকেই বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রায়’ কাজ করার সময় আমার চিঠির শিরোনামে কেউ কেউ সম্বোধন করতেন, প্রিয় শামীম ভাই বলে। রেডিও থেকে চুক্তিপত্র আসতো জনাব শামীম আজাদের নামে। নিমন্ত্রণ পত্র আসতো মিঃ ও মিসেস শামীম আজাদের কাছে। সে সময় আমি আমরা থাকতাম ‘বিলেতের সাড়ে সাতশ দিন’র লেখক হিসেবে খ্যাত সাহিত্যিক আব্দুল হাই স্যারের ধানমন্ডির বাড়িতে। গাড়ি বারান্দা ছাড়িয়ে বাগানে ফুটে থাকতে স্যারের বিলেত থেকে আনা নিজের হাতে চাষ করা সাদা গোলাপের ঝাঁড়। তারপরেই গেইট। সেখানেই প্রবেশ ঘন্টা। আমার সংগে একান্তভাবে লেখা লেখি নিয়ে দেখা করতে আসা লোকদের ঘন্টা শুনে অতদূর গিয়ে গেট খুলতে আমি যেতাম না। যেত আজাদ। সে সকল ব্যক্তি প্রতি নিয়ত তার সংগে শামীম ভাই বলেই করমর্দন করতেন। আজাদ হেসে বলতেন, আসুন, শামীম আমার স্ত্রীর নাম।
ব্যক্তিকেন্দ্রীক নারী বিষয়ক কিছু না থাকলে শামীম তরফদার কিংবা শামীম আজাদ যে নারী তা সনাক্ত করার তো উপায় নেই। গুণগত দিকে সবই তো সমান। সমান নয় সমাজের পুরুষের চোখ।
আড়ালে শুনেছি, ও উনি নারী কবি! আমি বা আমরাতো ভাবতাম তিনি পুরুষ কবি। এসব স্থানে সীমা টানা নয় জিজ্ঞাসার উত্তর যা কি না বিশেষণ বা পরিচিতির বিস্তার বলে গন্য করতে হবে।
আজ রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মদিন। সেই মহিয়সী নারীর নামেও ‘বেগম’ লাগিয়ে দিয়ে সেটাকে তাঁর মৃত্যুর পর বেগম রোকেয়া করে ফেলেছে। হায়রে পুরুষের সমাজ! কিংবা পুরুষ লালিত নারী সমাজ!
প্রিয় পাঠক কখনো কি প্রশ্ন জাগে? তার নামের প্রথম অংশে তাঁকে নারী বলে সনাক্ত না করা গেলে উনবিংশ শতাব্দীতে সাহিত্যিক হিসেবে
তাঁর মূল্যায়ণ হতো আরো ভিন্ন, আরো শীর্ষে?
এই শুভ দিনে রোকেয়ার চরণে পুষ্প রেখে যাই।