হাবিবা লাবনী
কলেজ বান্ধবী মল্লিকা কে নিয়ে পড়েছিলাম মহাঝামেলায়। অনার্সের পড়াশুনা আলাদা প্রতিষ্ঠানে হওয়ার কারনে অনেক দিন দেখা নাই। হঠাৎ একদিন এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে সেকি কাঁন্না। একেবারে বাচ্চাদের মতো। ভ্যাঁবাচেকা খেয়ে গেলাম। একটু সামলে জিজ্ঞেস করলাম,--কিরে দোস্ত! কি হয়েছে? এমন করছিস কেন?
কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগলো,
----- আমার আর বাচঁতে ইচ্ছে করছেনা।
-----আমাকে সব খুলে বল। তুই ই তো আমাকে সবসময় সাহস দিতি। আর এখন তোর এই অবস্থা কেমনে হইলো।
-----সুদীপকে আমার কাছে এনে দে। আমি ওকে হারিয়ে ফেলেছি। আমি আর কিছুই ভাবতে পাচ্ছিনা।
এইবার আসল কেসটা বুঝতে পারলাম। প্রেমিক সুদীপের সাথে অস্বাভাবিক বিয়োগ বেদনাই ওর ইমোশনাল ডিসঅর্ডারের মূল কারন। সবই ডোপামিন হরমোন সিক্রেশনের ফল। তা ছাড়া কিছু ভুল ধারনাও মাথায় ভাইরাসের মতো কাজ করছে।
টানা বিশ্রাম আর সুষ্ঠু আলাপচারিতার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব। মাথা থেকে ভুল বিশ্বাসের ভাইরাসটা সরিয়ে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ওর দরকার রিলাক্স, ভালো যত্ন, সঠিক কাউন্সেলিং। সাথে একটু ভালোবাসা সুপার টনিক হিসেবে কাজে লাগবে।
ইউনিভার্সিটির ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ডাক্তারকে সমস্যার কথা বলে কিছু রিলাক্সিন ট্যাবলেট নিয়ে আসলাম। সময়মতো খাওয়া, ঘুম,গোসলের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চললো। ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি, আড্ডা, ক্লাসে নিয়ে যাওয়া সর্বোপরি সারাক্ষণ সাথে রাখা কিছুই বাদ পড়লোনা। ওকে বুঝানো হলো এখনো পৃথিবী প্রেমে পরিপূর্ণ। একজন যাবে তো আরেকজন আসবে। শূণ্যস্থান কখনো খালি থাকেনা। জীবনের এখনো অনেক বাকি। এতো দ্রুত এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার কোন মানে হয়না।
আস্তে আস্তে মল্লিকার পুরাতন ঘোর কেটে যায়। আউট অফ সাইট--- আউট অফ মাইন্ডে এর মতো। তাছাড়া স্থান, কাল, পাত্র পরিবর্তনেরও একটা বিষয় আছে। দিন যত যায়, শরীরের সাথে প্রকৃতির সম্পর্কও তত স্থির হয়। মরার পরিবর্তে আবার নতুন করে সব ভাবতে থাকে।
অবশেষে একদিন নিশ্চিত বিশ্বাস হয়, এত সুন্দর, সক্রিয় একটা শরীর নিয়ে সে দ্রুত সে মরছেনা। একদিন নিজেই বলে, সে আর নিজেকে আগাম মৃত ভাবছেনা। সতেজ মন নিয়ে মল্লিকা সুন্দর জীবনের উপভোগে মেতে উঠে।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com
Copyright © 2024 RED TIMES. All rights reserved.