আজ রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে কারণে পদত্যাগ করলেন উপাচার্য অনুপম সেন

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৭, ২০২৪, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ণ
যে কারণে পদত্যাগ করলেন উপাচার্য অনুপম সেন

Sharing is caring!

টাইমস নিউজ 

চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন পদত্যাগ করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন শিক্ষাবিদ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গত কয়েকদিন ধরে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চলে আসছিল।

তাদের দাবির মুখে উপাচার্যের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য কাজী শামীম সুলতানা এবং কোষাধ্যক্ষ তৌফিক সাঈদও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বরাবরে তিনজন পদত্যাগপত্র জমা দেন।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ইফতেখার মনির বলেন, ‘পদত্যাগপত্রে স্যার বার্ধক্যজনিত কারণে দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশের কথা জানিয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কোষাধাক্ষ্যও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পদত্যাগপত্রে তারাও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন।’

এর আগে, শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুপম সেনসহ তিন শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। নগরীর জিইসি মোড় ক্যাম্পাসের সামনে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

বিক্ষোভ চলাকালে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা শুক্রবার আটটা পর্যন্ত তাদের পদত্যাগের সময় বেধে দেন। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এদিন সন্ধ্যায় উপাচার্য অনুপম সেন গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যেসব ছাত্ররা আমার পদত্যাগ চেয়েছে, তাদের আমি জানাতে চাই, আমি সারা জীবন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। আমি কোনোদিন বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো বিরূপ মন্তব্য করেছি, এমনটি মনে পড়ে না। ছাত্রদের যেমন সমানভাবে দেখেছি, তেমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও সম্মানজনকভাবে ব্যবহার করেছি।’

অনুপম সেন বলেন, ‘বাংলাদেশে কতিপয় ব্যক্তি গত কয়েক বছরে যেভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হচ্ছিল, তা আমাকে প্রচণ্ড ব্যথিত করেছিল, আঘাত করেছিল। এ জন্যই আমি আওয়ামী লীগের গত দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে যাইনি। আমি সিআরবি রক্ষার জন্য যে আন্দোলন করেছিলাম, সেই আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণভাবে সরকারের অভিপ্রায়বিরোধী।’

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার বেতন ও ভাতার বাইরে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির তহবিল থেকে এক পয়সা অর্থ অনৈতিকভাবে গ্রহণ করিনি। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় কোনো দুর্নীতি, অন্যায় ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ করিনি। জীবনে কোনো দিন জ্ঞাতসারে কারও ওপর কর্তৃত্ব করিনি, সবার উপকার করার চেষ্টা করেছি। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকি বা না থাকি, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল কামনা করব আমার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত।’

উল্লেখ্য, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের মালিকানায় আছে। তার সন্তান সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে মহিউদ্দিন পরিবারের আইনি বিরোধ আছে।

অনুপম সেন কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন
তিনি একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সমাজবিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, অনুবাদক, শিক্ষাবিদ। দীর্ঘ চার দশক শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকাকালীন তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সর্বশেষ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তার পিতা বীরেন্দ্রলাল সেন। বীরেন্দ্রলাল সেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে এমএ এবং রিপন কলেজ থেকে বিএল ডিগ্রি অর্জন করে ১৯২০ সালে চট্টগ্রাম কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তাঁর প্রমাতামহ ছিলেন বিশ্ববিশ্রুত পণ্ডিত ও তিব্বত-পরিব্রাজক শরচ্চন্দ্র দাশ।
অনুপম সেনের গবেষণার ক্ষেত্র বহুমুখী, যার মধ্যে মানবসভ্যতা, বাঙালি রেনেসাঁস, বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং দেশচেতনা অন্তর্ভুক্ত। তাঁর বই “The State, Industrialization and Class Formations in India” বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সাহসী নেতা হিসেবে পরিচিত।