আজ মঙ্গলবার, ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবার শুরু হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলন

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ
আবার শুরু হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলন

Sharing is caring!

টাইমস নিউজ

 

 

আবার শুরু হয়েছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ।
গত জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। সেই আন্দোলনের শুরুটাও কোটা সংস্কারের দাবিতেই। যার জেরে এক পর্যায়ে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনও হয়েছে। পরে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের সমর্থনেই ক্ষমতায় এসেছে নতুন সরকার। অথচ অভ্যুত্থানের মাত্র পাঁচ মাস পরেই আবারও কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন আরেক দল শিক্ষার্থী। গত রবিবার (১৯ জানুয়ারি) দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই মেডিক্যালে ভর্তিতে কোটার বিষয়টি সামনে আসে। আন্দোলনকারীদের দাবি, মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব ‘অযৌক্তিক’ কোটা বাতিল করে মেডিক্যাল কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল পুনর্প্রকাশ করতে হবে। এই দাবিতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।

এর আগে সোমবার (২১ জানুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে অবস্থান ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। পরে তাদের একটি প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়, যে কোটাপ্রথা বাতিলের জন্য সহস্র ছাত্র-জনতা শহীদ হলেন, সেই কোটাব্যবস্থার বিলোপ এখনও হয়নি। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় এবার মুক্তিযোদ্ধা কোটার জন্য সিট বরাদ্দ করা হয়েছে ২৬৯টি, যা গতবার ছিল ১০৮টি। যেখানে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় কাট মার্ক ৭৩ দশমিক ৭৫, সেখানে ৪০ মার্ক পেয়ে কয়েকজন চান্স পেয়েছেন। উপযুক্ত মার্ক না পেয়েও অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমে দেশের শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পান। আমরা এই বৈষম্য কোনোভাবেই মেনে নেবো না।

কোটা সংস্কার আন্দোলন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রাণ দিল, অথচ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পোষ্য কোটা আজ বহাল আছে। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় কোটা নিয়ে কথা উঠেছে। সরকারের পাঁচ মাস হয়ে গেলো, অথচ শিক্ষার্থীদের অনূভূতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারছে না।

মেডিক্যাল ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে পোষ্য কোটা নিয়েও সম্প্রতি আলোচনা উঠেছে। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিল করা হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত অন্যান্য সব কোটা রয়েছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বহাল রয়েছে।

এ বিষয় জানতে সোমবার (২০ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানকে একাধিকবার ফোন দিয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হকের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি আশা করবো শিক্ষার্থীদের অনূভূতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ সম্মানের সঙ্গে দেখবে। শিক্ষার্থীদের অনুভূতিকে প্রধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও আমার বিশ্বাস।’

এদিকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরে খবর নিয়ে জানা গেছে, বিগত সরকারের সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোটা পদ্ধতি বহাল আছে। যতক্ষণ না নতুন করে সরকার কোনও সিদ্ধান্ত না দেয়, ততক্ষণ বিদ্যামান কোটা বহাল রেখে নিয়োগ অব্যাহত থাকবে।

২০২৪ সালের ২৩ জুলাইয়ের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত, স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরি বা কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা বিদ্যামান রয়েছে।

এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও নিয়োগে ৫ শতাংশ কোটা পেয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।