আজ সোমবার, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রীমঙ্গলে রেকর্ড শীতের শেষ ছোঁয়া: পর্যটকদের উচ্ছ্বাস আর চা-বাগানের মোহনীয়তা

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৫, ০৭:০৪ অপরাহ্ণ
শ্রীমঙ্গলে রেকর্ড শীতের শেষ ছোঁয়া: পর্যটকদের উচ্ছ্বাস আর চা-বাগানের মোহনীয়তা

Sharing is caring!

তাপস দাশ শ্রীমঙ্গল:

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আকাশ জুড়ে উজ্জ্বল রোদ, বাতাসে মিশে থাকা হালকা শীতের পরশ, আর বিস্তীর্ণ চা-বাগানের সবুজ সমারোহ—সব মিলিয়ে যেন এক মোহময় পরিবেশ।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে এটিই শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে কুয়াশার তেমন উপস্থিতি না থাকায় সকালে সূর্যের আলো উজ্জ্বলভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা শীতের আমেজকে উপভোগ্য করে তুলেছে।

শ্রীমঙ্গল মানেই পর্যটকদের স্বর্গ। দেশ-বিদেশের ভ্রমণপ্রেমীরা এখানে ছুটে আসেন প্রকৃতির অনন্য রূপ দেখতে। শীতের শেষে হালকা কুয়াশা আর স্নিগ্ধ বাতাসের সঙ্গে চা-বাগানের সবুজ সৌন্দর্য এক ভিন্ন আবহ তৈরি করেছে। পর্যটকদের কেউ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছেন, কেউবা সাইকেল নিয়ে পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য অবলোকন করছেন।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মো: আনিসুর রহমান জানান, ‘আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মাসের সর্বনিম্ন। আগামী এক-দুই দিন তাপমাত্রার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে, এরপর ধীরে ধীরে উষ্ণতা ফিরতে পারে প্রকৃতিতে। তবে সূর্যের উপস্থিতির কারণে ঠান্ডার অনুভূতি ছিলো কিছুটা কম।’

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক লোপা খানম বলেন, “আমি প্রথমবারের মতো শ্রীমঙ্গল এসেছি, আর এখানে এসে মনে হলো যেন প্রকৃতির এক অনন্য কোলে এসে পৌঁছেছি। সকালবেলা চা-বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটা, শীতের মিষ্টি আমেজ আর পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য—সব মিলিয়ে সত্যিই এক স্বপ্নময় অভিজ্ঞতা।”

এদিকে চট্টগ্রাম থেকে আসা শিশির পাল বলেন, “আমি ভাবিনি, শীতের শেষে এসে এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ পাবো। শ্রীমঙ্গলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য শুধু বর্ষা বা শীতেই নয়, বছরের সব ঋতুতেই যেন আপন মহিমায় ভাস্বর। শ্রীমঙ্গল শুধু চায়ের জন্যই বিখ্যাত নয়, এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলো যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।”

শ্রীমঙ্গল পর্যটন কল্যাণ পরিষদের সদস্য সচিব তারেকুর রহমান পাপ্পু বলেন, “অনেকের ধারণা, শীত চলে গেলে শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য কমে যায়। কিন্তু প্রকৃতির আসল রূপ তো চোখের অনুভূতির ওপর নির্ভর করে। শ্রীমঙ্গলে প্রতিটি ঋতুতেই এক বিশেষ সৌন্দর্য থাকে। শীতের শেষে যখন গাছের পাতায় শিশির বিন্দু ঝলমল করে, তখন এখানকার সৌন্দর্য অন্য মাত্রা নেয়। তাই পর্যটকদের প্রতি আমাদের আহ্বান, শুধু শীতকাল নয়, শ্রীমঙ্গল সব সময়ই আপনাদের জন্য অপেক্ষায় থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “শ্রীমঙ্গলে ট্যুরিস্টদের সুবিধার্থে পর্যটন কল্যাণ পরিষদ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। রয়েছে পর্যটনবান্ধব গাইড সার্ভিস, গাড়ি ভাড়া, সাইকেল ট্রিপ এবং ট্র্যাকিং সুবিধা। যারা প্রকৃতিকে সত্যিকারের অনুভব করতে চান, তারা চাইলে চা-শ্রমিকসহ স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে সময় কাটিয়ে তাদের জীবনধারা জানতে পারেন। শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য কখনো ফুরাবে না, শুধু পর্যটকদের মন ভরিয়ে দেবে নতুন রঙে, নতুন আমেজে।”

শ্রীমঙ্গলের শীতের শেষ ছোঁয়া পর্যটকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে। চা-বাগানের শীতল বাতাস, পাহাড়, আর মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি—সব মিলিয়ে এক মায়াবী স্বর্গরাজ্য। শীত যাক বা আসুক, শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য কখনোই মলিন হয় না, বরং প্রতিটি মুহূর্তে নতুন রূপে ধরা দেয়।