Sharing is caring!
মজিদ মাহমুদ
মুসলিম বিশ্ব থেকে খ্রিষ্টান বা পশ্চিমা দুনিয়া স্পষ্টত যে দু’একটি বিষয়ে আলাদা বলে দাবি করা হয় তার অন্যতম হলো নারী-পুরুষের সম্পর্কের ধরন। প্রায়োগিকভাবে সত্য না হলেও তাত্ত্বিকভাবে মুসলমানগণ নারী-পুরুষের সম্পর্কে ক্ষেত্রে একটি সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ফলে আপাত সম্পর্কের পুরুষতান্ত্রিক অধিকারের তুল্য বিচারে নারী অনেক ক্ষেত্রে সম-অধিকারে ভূষিত নন। আবার নানা দিক থেকে নারীর অধিকার বা মর্যাদা পুরুষের চেয়ে উচ্চতর পর্যায়ে উন্নত করা হয়েছে বলে স্বপক্ষে দাবি করা হয়ে থাকে। তাত্ত্বিকভাবে নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইসলাম ছাড়া আর কোনো ধর্ম এত খোলামেলা এবং সহজ মিলনের উপায় করে দেয়নি। বিশেষ করে নিকট রক্তের চৌদ্দ প্রকার নারী বা পুরুষ ভিন্ন সকলেই সকলের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন; এ ক্ষেত্রে বয়স, বর্ণ, জাতি-ধর্ম, গোত্রের উচ্চ-নিচের ভেদাভেদ রাখা হয়নি। এমনকি ইসলাম বহুগামিতাকেও বিবাহের মাধ্যমে সমর্থন করেছে; আর এটি কেবল পুরুষদের বেলায় একচ্ছত্র করা হয়নি; নারীরাও পর্যায়ক্রমে একাধিক স্বামী গ্রহণ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ইসলাম যেহেতু পারিবারিক জীবনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে; সেহেতু পরিবারের সীমারেখার মধ্য থেকে এ ধরনের সম্পর্ক নির্ণিত করা হয়। যেমন পারিবারিক সম্পর্কের প্রধান ভিত্তি সম্পত্তির আইনগত অধিকার; আর এ অধিকার কেবল ইসলামে নয় সকল রাষ্ট্রীয় আইনেও বৈধ উত্তরাধিকারগণই ব্যক্তির সম্পদের মালিকানার দাবিদার হয়ে থাকে। একইসঙ্গে একাধিক স্বামী রাখার ব্যাপারে হয়তো নারীদের ক্ষেত্রে আইনগত বাধার অন্যতম কারণ, নারীই কেবল সন্তান ধারণ করতে পারেন, আর তা কেবল একসঙ্গে একটি পুরুষের দ্বারা। যদিও এ সব যুক্তির পাল্টা যুক্তিও রয়ে গেছে মাতৃতান্ত্রিক সমাজের কাছে।
কিন্তু আমার আলোচনার বিষয় মোটেও সেটি নয়; ইসলামের ভালো বা মন্দ কিংবা পশ্চিমা দুনিয়ার এ ক্ষেত্রে এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকা না থাকা সম্পূর্ণ তাদের নিজ নিজ বিশ্বাস ও চর্চার বিষয়। আমি বরং সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের ট্রাম্প ও হিলারির নোংরা চালিকাশক্তি হিসাবে যে বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে, তা হলো যৌনতা; আর এখানেই আমার কিছু পর্যবেক্ষণ তৈরি হয়েছে যে, আদৌ পশ্চিমা দুনিয়া নারীর বাণিজ্যিক ব্যবহারের তুলনায় পশ্চাৎপদ মুসলিম দুনিয়া থেকে কতখানি বেরুতে পেরেছে।
বিপরীত লিঙ্গের বহুমুখী সাহচর্যের আকাক্সক্ষার ব্যাপারে ইসলাম যত পূর্ব থেকে সচেতন ছিল, অন্য কোনো ধর্ম কিংবা সমাজব্যবস্থা তা ভাবনার মধ্যে আনতে পারেনি। কারণ কিছুদিন আগ পর্যন্ত, পশ্চিমা দুনিয়ায় নারীর যৌনতা স্বীকৃত ছিল না; যিশুখ্রিষ্টের মিলনের পাপময় শিক্ষা খ্রিষ্টান দুনিয়াকে উন্মাদগ্রস্ততায় পরিণত করেছিল বলে ধারণা করা হয়। এমনকি বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর ‘আত্মজীবনী’তে উল্লেখ করেছেন, যৌনতাকে যেহেতু খ্রিষ্টধর্মে পাপকর্ম হিসাবে দেখা হয়, এমনকি যিশুর ভাষ্যানুসারে কেউ যদি তার স্ত্রীর দিকেও কামার্তভাবে তাকায় তাহলেও তাকে বিচারের দিনে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। আর এইসব শিক্ষার ফলে তার দেশের অধিকাংশ নারী এমনকি তার নিজের ফুফুরাও উন্মাদগ্রস্ততায় ভুগতেন। পশ্চিমা দুনিয়ায় নারী-পুরুষের অবাধ সম্পর্কের ব্যাপারে বর্তমানে যে ওকালতি করা হয়ে থাকে, তার মূলে মূলত ভিজ্যুয়াল মিডিয়াসমূহের বিজ্ঞাপনী, পর্ণোগ্রাফি কিংবা নানা যৌন-সরঞ্জামাদি বিক্রির ব্যবসায়কে প্রমোট করার স্বার্থে বলে বিবেচনা করা হয়। আর এ-সবকে কেন্দ্র করে; কিংবা কারখানার প্রয়োজনে, অধিক মুনাফার আশায় পারিবারিক জীবনের অবসানের চেতনা থেকে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ককে উৎসাহিত করা হয়। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকেও দেখেছি পশ্চিমের অনেক শহরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আপনি ক্ষুধার অন্নের মতো যৌনতাও ভিক্ষা করতে পারেন। অনেক নারী বা পুরুষ কেবল নিজের প্রয়োজনে নয়, অন্যের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করেও নাকি যৌনতাদানে তুষ্ট করে থাকেন। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেয়া যেমন পূণ্যকর্ম হিসাবে বিবেচিত সেহেতু এটিও শারীরিক ক্ষুধা ভিন্ন নয়; কারণ এর ঘাটতি হলেও মানুষ শরীর-মনে বিকলাঙ্গ হতে পারে। আর এটি পশ্চিমা দুনিয়ায় নতুন হলেও প্রাচ্যে মোটেও নতুন ধারণা নয়। বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে মধ্যযুগ পর্যন্ত, এমনকি এখনো হয়তো কোথাও এ ধরনের আচরণ আছে বলে সমাজতাত্ত্বিক-নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা যায়; অতিথিকে সর্বোচ্চ তুষ্ট করার জন্য আপন নারীদেরও সঙ্গদানে উৎসাহিত করা হয়।
ইসলামের প্রথম যুগে যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের বিষয়টা ছিল, তা কেবল পুরুষের পক্ষ থেকে লাভজনকভাবে দেখা হয়নি; নারীদের জন্যও ছিল অপার সম্ভাবনার। এমনকি ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময়ে ইরানে বহু নারী বিধবা হয়ে গেলে প্রেসিডেন্ট রাফসানজানি চুক্তিবদ্ধ বিয়ের পুনঃপ্রবর্তন করলে সেখানকার বিধবারা তার প্রতি অত্যন্ত প্রীত হন। এমনকি তারা নিজেদের চুক্তিবদ্ধ বিয়ের বিজ্ঞাপনের জন্য মসজিদে চাদর উল্টো করে পরে পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারতেন। এক খ্রিষ্টান লেখিকা এক ইরানি মুসলিম পুরুষকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আচ্ছা তোমাদের ধর্মে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কে এত কঠিনভাবে দেখা হয় কেন, এর শাস্তিও ভয়াবহ?’ তিনি তার উত্তরে বলেছিলেন, ‘একটি ধর্ম নারী-পুরুষের মিলনের এমন অবাধ সুযোগ করে দিয়েছে- যাতে সামাজিক অনাচার না হয়; সুতরাং এত আইনগত সুযোগ সত্ত্বেও কেউ যখন বেআইনি পথে পা বাড়ায় সেটা তো চৌর্যবৃত্তি ও বিশ্বাসভঙ্গতারই নামান্তর; আর এই অপরাধে তো সর্বত্র কিছুটা শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।’
ইসলাম যৌনতা নিয়ে কি বলেছে, এটি অন্য আলোচনা; আমি শুধু অবাক হচ্ছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পৃথিবীর বৃহত্তর গণতন্ত্র ও তথাকথিত সভ্য দেশের সাধারণ নির্বাচন দাঁড়িয়ে আছে স্রেফ যৌনসম্পর্কের ধরনের উপর। আমরা ইতোমধ্যে সবাই জেনে গেছি, সে দেশের নির্বাচনের দু’জন পদপ্রার্থীর নির্বাচনি মেনিফেস্টো কি; এবং আমরা তা ভুলেও গেছি তাদের পারস্পারিক চারিত্রিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে। খুব স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে, ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ধনির বখাটে সন্তান, যিনি নিজেও অন্যতম ধনাঢ্য মার্কিনি। তিনি যেভাবে ধনি হয়েছেন, যেভাবে ব্যবসায়-বাণিজ্য করে আসছেন, ঋণখেলাপি, কর ফাঁকি- এসবই তো মার্কিন পুঁজির ভিত্তিভূমি। পাশাপাশি তিনি সেলিব্রেটি শো’র নায়ক, সুন্দরি প্রতিযোগিতার আয়োজক; ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার বিয়ে করেছেন; কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এর দ্বারা তার চরিত্রের কি ক্ষতি হয়েছে। যিনি সুন্দরি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে লক্ষ লক্ষ ডলার উপার্জন বা ব্যয় করে থাকেন, তিনি কোনো সুন্দরীর সঙ্গে মিলিত হতে চাইবেন; কিংবা কোনো সুন্দরি তার মতো ধনাঢ্য সেলিব্রেটির সঙ্গে মিলিত হতে চাইবেন, এতে মার্কিন সমাজের নৈতিকতার কি ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে। বরং এ ক্ষেত্রে আমার কাছে বারবার পশ্চাদ্পদ ইসলামি সমাজের আইনের গোঁড়ামিপূর্ণ এপেন্ডিক্সের বিষয়টিই মাথায় আসছে। তাহলে কি, ইসলাম নারী-পুরুষের যে নৈতিক দায়িত্বের কথা দাবি করে থাকে, তা কি এখনো পশ্চিমা সমাজের মধ্যেও নৈতিকতার একটি মাপকাঠি হিসাবে রয়ে গেছে।
বারাকের বিষয়টি আমরা এখনো জানতে না পারলেও তার পূর্বসূরি ডেমোক্রেট ক্লিনটন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারির স্বামী তার প্রেসিডেন্সি আমলে অফিসের এক জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে কত যে হৈ চৈ; আরেক ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট কেনেডির যৌনাচরণের কথা তো কিংবদন্তী হয়ে আছে। তাহলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কেন এ নিয়ে নাজেহাল করা হচ্ছে। বিশেষ করে এই সময়ে এসে বিগতযৌবনাদের অনেকেই তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে হাজির হচ্ছেন; একদিন হয়তো বা তারা তাকে সঙ্গদান করেছিলেন। এটি যে ওই সব নারী, এমনকি ডেমোক্রেট হিলারির নির্বাচনি চাল, এবং নৈতিক স্খলন তা কিন্তু বলাই যায়; কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি সত্যিই ওইসব নারীদের ইচ্ছের ও সম্মানের বিরুদ্ধে আঘাত করে থাকেন তাহলে তারা আগে কেন তার বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ আনেননি। না এখনো কি কেউ নাই যারা টাম্পের সঙ্গে মিলিত হবার স্বপ্ন দেখেন না? সুবিধামতো নারীত্বের হাতিয়ার পুরুষের বিরুদ্ধে ব্যবহারই তো পুরুষতান্ত্রিকতার নামান্তর। ইচ্ছে হলে নারী যে কোনো কালে পুরুষতান্ত্রিক আইনের সুযোগ নিয়ে তাদের নিজস্ব সম্পর্কের আইনি বাণিজ্যীকরণ করতে পারবেন। এটি কি ধরনের একটি উন্মাদ জাতি যে, যার অস্তিত্ব সমাজে কিংবা ব্যক্তির জীবনে উপস্থিত নেই, সেই যৌন নৈতিকতা কেবল তাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জন্য প্রযুক্ত হবে। তাহলে কি এটি যাজকতন্ত্রেরই আরেকটি রূপ। আপনি নিজে বিয়ে করবেন, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়বেন, সন্তান ও অর্থাদির পাহাড় গড়বেন, আর তথাকথিত ফাদার আর নানগণ তাদের জননতন্ত্র অক্ষত রাখবেন, এই পরস্পরমুখী শিক্ষাই পশ্চিমকে ভণ্ডামিতে সহায়তা করেছে। এটিই হলো পশ্চিমা হিপোক্রেসির উদাহরণ, আপনি যা ভালো মনে করেন, তার প্রতিফলন অন্যের জীবনে দেখতে চান; আর অন্যকে স্কেপ গৌট বানিয়ে ভবনদী পার হতে চান। হিলারি ক্লিনটন যদি তার স্বামীর প্রমাণিত নারী কেলেঙ্কারির পক্ষে থাকতে পারেন, তাহলে নির্বাচনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য কোনো নৈতিক অবস্থানে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনি হাতিয়ার শানাচ্ছেন।
হিলারি ক্লিনটন একজন নারী; মার্কিন সমাজ এখনো এতটা উন্নত হয়নি যে নারীকে পুঁজির ও পুরুষের সমানে তুলে আনতে পারেন। মার্কিন সমাজে নারীর সমান অধিকার আছে- এই প্রপঞ্চের সঙ্গে কেবল তুলনা চলে মুসলিম পুরুষেরা যেমন দাবি করে থাকেন তাদের ধর্ম নারীকে নানাভাবে সম্পত্তির সমান অধিকারী করা হয়েছে; এর বাস্তবতা আমি বলতে পারবে না; তবে বাস্তবতা যে নাজুক তাতে সন্দেহ নেই। হিলারি ক্লিনটন নারী হিসাবে, যে সমীহ আদায় করতে চাচ্ছেন, তার মূলে আছে পুরুষতান্ত্রিকতা; পুরো পুরুষের ভূমিকায় তিনি অভিনয় করছেন, নারীর ক্ষমতায়নের সঙ্গে এর কোনো যোগ নেই।
মার্কিন নির্বাচনে এই সব যৌন প্রচারণার আড়ালে সত্যকে ঢেকে দেয়ার একটি সাক্ষাৎ প্রবণতা রয়েছে। কারণ ট্রাম্পের ফ্যাসিবাদি প্রচারণায় মার্কিনিরা মোটেও ক্ষুব্ধ নন; কারণ তাদের মধ্যে রয়েছে ভিক্টোরিয়ান মূল্যবোধ, নীলরক্ত, বর্ণ ও শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা; যা প্রায় শতাব্দী ধরে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটরা মিলেই গড়ে তুলেছে। ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারণায়, অভিবাসী, মুসলিম, নিগা (র) ও মেক্সিকানদের বিরুদ্ধে কথা বলে এমন কোনো অপরাধ করেননি, যেমনটি বুশ কিংবা আমেরিকার যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্টগণ করেছেন। বরং আমাার কাছে মনে হয়েছে, এই একজন যে প্রথম খাঁটি আমেরিকান আকারে আবির্ভূত হয়েছেন, যার অন্যায় কর্মকা- সম্বন্ধে আপনি আগেই সতর্কতা অবলম্বন করতে পারবেন। কিন্তু ইতোপূর্বে সকল মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাদের খারাপ কাজ ভালোর আড়ালে ঢাকতে চেয়েছেন; ফলে শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ করা সম্ভব হয়নি। ট্রাম্প সম্প্রতি হিলারির বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তুলেছেন, তার পশ্চাতে রয়েছে পুঁজিরক্ষার লড়াই বলে মূলত সবাই হিলারির পতাকাতলে সংঘবদ্ধ হচ্ছে। কারণ, এ কথা তো ঠিক, হিলারি ট্রাম্পের মতো ব্যবসায়ি না হলেও অর্থগৃধœুতা তার কম নয়। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনসহ নানাভাবে চাঁদাবাজিকে তিনি রাজনীতির নামে বৈধ করেছেন; সেদিক থেকে রাজনীতিই হিলারি ক্লিনটনের ব্যবসায়; আর দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুদ্ধ জনপ্রিয় করার দায় তিনি এড়াতে পারেন না।
যদিও এই নির্বাচনে আমিও হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে; তবু যে লাউ সেই কদু। সারা বিশ্বের মুসলমানরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতোই মাথামোটা; মোটা মানে ফ্যাটি, অল্পতেই গরম হয়ে যায়। কিন্তু ইংরেজি প্রবাদ থেকে তারা কিছুই শিক্ষা নিতে পারছে না। ছোটবেলায় আমরা যখন কোনো কুকুরঅলা বাড়িতে যেতাম, তখন মনে মনে এই বাক্যটি আওড়াতাম, ‘বার্কিং ডগ ইজ সেলডোম বাইট।’ ভাগ্যিস, এখনো আমি কুকুরের কামড় খাইনি; কারণ সর্বদা নীরব কুকুর দেখলেই অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে যায়। এমনকি ক্ষ্যাপা কুকুর ডাকতে পারে না; চলমান কোনো বস্তু দেখলেই কামড়ে দেয়। আর কুকুর কামড়ালে যে যন্ত্রণা, তারচেয়ে বেশি যন্ত্রণা লুই পাস্তুরে। ব্যাটা বুড়া গোপনে গোপনে এমন সব আবিষ্কার করেছেন, যেমন তার হাতুড়ে আবিষ্কার, তেমন তার প্রয়োগ। তার জন্য নোবেল কমিটি একটুও তাকে পছন্দ করতেন না। জলবসন্ত আর জলাতঙ্ক- একই জিনিস না কি। আর আবিষ্কার নাকি বিজ্ঞানের সঠিক পথ ধরে হয়নি। রয়্যাল একাডেমির স্বীকৃতি না পেলে রয়্যাল একাডেমি তো আর একজন হাতুড়ে ডাক্তারকে তার মূল্যবান সনদ তুলে দিতে পারেন না। আর এই রাগেই তিনি জলাতঙ্কের টিকা একেবারে নাভির চারপাশে প্রয়োগ করেছেন। নাভিমূলে যেহেতু যেতেই পারবেন না, নাভি দেখতে তো পারবেন। তাও একটি নয়, একেবারে গুণেগুণে চৌদ্দটি। চাঁদের ষোলকলা পূর্ণ হওয়ার আগে ছাড়া তার চাঁদে পাওয়ার জো নেই। আমরা যারা ছোটবেলায় গুটিবসন্তের টিকা নিয়েছি, তাদের গায়ে অক্ষয় হয়ে আছে লুই পাস্তুরের দাগ, হাতের বাহুর উপরের দিকে অথবা কব্জির মাঝখানে; তাও একটা নয় দুটি। ব্যাটা এমন ঘাঘু নীরবে সবার শরীরে সিল মেরে গেছেন; ঠিক নোবেল কমিটির সিলের মতো; গোপনে একফোঁটা খাইয়ে দিলে কি হতো।
আমরা যখন শুনতাম, টিকাওয়ালা আসছে, তখন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু বড়রা গ্রামের প্রবেশ ও বহির্মুখে জাল বিস্তার করে রাখতেন। তা ছাড়া পলানোর ফাঁকফোকড় তো তাদের জানাই থাকত; পালানোতে খুব একটা রেহাই হতো না। পাঁজাকোলা করে তুলে এনে টিকাওয়ালার হাতে তুলে দিত। আমরা ঠিক এই ক্ষেত্রে পিতামাতার এই আচরণ বুঝতে পারতাম না; নিজের সন্তানের শরীরে ক্ষত করার জন্য কেউ এমন আচরণ করে; অথচ কাঁটা ফুটলেও যাদের সহ্য হয় না।
(নিবন্ধটি ২০১৬ সালে হিলারী-ট্রাম্প নির্বাচনের আগে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। যখন দেশি বিদেশি সব মিডিয়ায় হিলারীর পক্ষে রায় দিয়েছিল, তার মধ্যে এটি ছিল ব্যতিক্রম। আজো লেখাটির গুরুত্ব আছে।)