Sharing is caring!

সিলেট প্রতিনিধি
আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা নিজেও একটা আয়নাঘর হয়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক, লেখক ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ।
তিনি বলেছেন, যখন জনগণ শাসক বদলাতে পারে না তখন শাসক জনগণ বদলিয়ে ফেলে। আমাদেরকেও বদলে দিয়েছে। যেখানে দুই আড়াই হাজার কিশোর-তরুণকে হত্যা করা হলো বর্বরভাবে। এখনও আমরা সব গল্প জানি না আয়নাঘরের মতো। আয়নাঘর শুধু এক জায়গায় ছিলো না প্রতিটি জায়গায় ছিলো। আপনার এই শহরেও (সিলেট) ছিলো। ছাত্রলীগের, যুবলীগের আয়নাঘর ছিলো। এমনকি সাংবাদিকতা নিজেও একটা আয়নাঘর হয়ে গিয়েছিলো।
আজ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সিলেটের ইমজা মিলনাতয়নে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান চৈতন্যের উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থান ও সংস্কৃতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব’ শীর্ষক আলোচনায় এ কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, একটা খবর এসেছে এক সম্পাদক নিজে রিমান্ডে গিয়ে আলেমদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আমি নিজে অনেক ক্রাইম রিপোর্টারদের চিনি যিনি বা যারা এসে বলতেন আজ তো ছিলাম। পরে ক্রসফায়ারে দিয়ে দিয়েছে। এই লোকগুলোর মধ্যে আমরা গত ১৫ বছর মিশেছি। এজন্যই আমাদের এই অবস্থা।
মূল আলোচক হিসেবে বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ আরও বলেন, আমরা কেন হাসিনার পরিবর্তন চাই নাই । হাসিনার টেকটিস ছিল কিছু লোককে ক্ষমতার সুবিধাভোগী বানিয়ে ফেলা। শিল্পী, সাহিত্যিক, অধ্যাপক, কবি, সাংবাদিকদের পুরস্কার দেওয়া। যারা তার কথা শুনবে না তাদের আয়নাঘরে পাঠিয়ে দেওয়া। তার ভোটের দরকার নাই প্রশাসন দরকার। শেখ হাসিনার আমলে পুলিশের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়লো, ক্যান্টনমেন্ট বাড়লো নগরায়ন কয়েকগুণ বাড়লো। এই নগরগুলো একটি দুর্গ সংস্কৃতি গড়ে তুলে। আমাদের দেশে যে ঔপনিবেশিক ও জমিদারি সংস্কৃতি আছে সেটাই আমাদের এই স্বাধীনতার পরে সেটা আরও বহাল করেছে। আওয়ামী লীগ অগণতান্ত্রিকতার সাথে একটি মহিমা যোগ করেছে। তারা বুঝিয়েছে অগণতান্ত্রিকতাই মহান। এটা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, এটা জাতির পিতার ধর্ম। এবং আমাদের ধর্মের তীর্থ আছে দিল্লি। শেখ হাসিনা তাঁর তীর্থেই ফিরে গেছেন।
স্বৈরাচারী মধ্যবিত্ত আমাদের শত্রু উল্লেখ করে ফারুক ওয়াসিফ বলেন, স্বৈরাচারী মধ্যবিত্তদের জগতে কোনো কিছুর অভাব হয়নি এত বছর। কিন্তু এই ১৫ বছরে একটা ধীর গণহত্যা হয়েছে। তার একটু আহা ওহু ও শুনতে পাইনি। যদি শুনতাম তাহলে আমাদের শিল্প সাহিত্যে সেটা আসতো। আমাদের মহান নাট্যকারদের গল্প শুরু হয় ফেসবুকে। এরপর ক্যাফেটেরিয়া এরপর নায়ক নায়িকা প্লেনে চড়ে বিদেশ যায়। এই ছিল তাদের জগত। এর বাইরে কি হচ্ছে তাদের দেখার প্রয়োজন মনে হয়নি।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সহআলোচকের বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল বাসিত শেরো, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা সিদ্দিকা, সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন, চৈতন্যের প্রকাশক রাজীব চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংস্কৃতিকর্মী লুবনা ইয়াসমিন।