আজ শনিবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইটভাটায় অভিযানের প্রতিবাদে সাভার আরিচা মহাসড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুর

editor
প্রকাশিত মার্চ ৫, ২০২৫, ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ
ইটভাটায় অভিযানের প্রতিবাদে সাভার আরিচা মহাসড়ক অবরোধ  ও গাড়ি ভাঙচুর

Sharing is caring!

কামরুজ্জামান হিমু 

ঢাকা আরিচা মহাসড়কে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের প্রতিবাদে আমিনবাজার ভূমি অফিসের সামনে আরিচা মহাসড়কে অবরোধ ছিল। সেখানে যান চলাচল বন্ধ করে, দেয় ইটভাটার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ।

আজ দুপুরে ঘন্টার পর ঘন্টা আরিচা মহাসড়ক বন্ধ ছিল যানচলাচল । আমিনবাজারে আরিচা মহাসড়কে বিক্ষুব্ধ ইটভাটা শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি পরিবহন ভাঙচুর করে এবং ধাওয়া পাল্টা শুরু হয়। কিছুক্ষণের পর সেনাবাহিনী, আমিনবাজার সহকারী কমিশনার( ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ বাসিত সাত্তার উপস্থিতে কিছু সময় ধাওয়া পাল্টা শুরু হয় আবার যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তারা অন্তবর্তী সরকারের কাছে দাবী জানান ঈদের আগে এরকম অভিযান তাদের পরিবারের জন্য ঈদে বিপদ ডেকে আনবে, আমরা হাজার হাজার শ্রমিক যামু কনে, খামু কনে সামনে ঈদ মালিকারা আমগো টাকা দিব না ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকে।
সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু বকর সরকার  জানান সাভার উপজেলায় মোট ইট ভাটার সংখ্যা ৯২ টি ।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ইট ভাটা রয়েছে সাভার উপজেলা ও তার পাশেই ধামরাই উপজেলা ও মানিকগঞ্জ জেলা।
গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারী বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে ইটভাটার ব্যাপারে বলা হয় সারাদেশে সব অবৈধ ইট ভাটা চার সপ্তাহের মধ্যে গুঁড়িয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য আদালত। এই আদেশে নড়ে চড়ে বসে সারা বাংলাদেশের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাঠ প্রশাসন।

তবে কেন এতদিন ইটভাটা চলছিল
প্রত্যেকটা উপজেলা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকায় বৈধ ও অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। কিন্তু এবার আদালতের কড়া নজরে এসেছে বিধায় এবং রীটের আদেশে বলা হয়েছে চার সপ্তাহের মধ্যে সারা বাংলাদেশের অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে ফেলার জন্য। তবে কেন এত তাড়াতাড়ি? আগে কি ইটভাটা চলতো না । চলত প্রশাসনকে ম্যানেজ করে।

 

উপজেলা প্রশাসন অবৈধ ইটভাটা কি জানতো না
লোকাল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকদের ম্যানেজ করে চলত অবৈধ ইটভাটা। এভাবে বছরের পর বছর চালিয়ে আসতো অবৈধ ইটভাটা কার্যক্রম । স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলত সাভার, ধামরাই, আশুলিয়া ও আমিন বাজারে বেশিরভাগ ইটভাটা গুলো। যেখানে দেখা গেছে উপজেলা প্রশাসনও নীরব আর পরিবেশ অধিদপ্তর ছিল অনেকটা উদাসীনতা। ঢাকা শহরে বহুতলা বিল্ডিং এর জন্য যত ইটের চাহিদা তার বেশিরভাগ যোগান দিত সাভার, আমিনবাজার, আশুলিয়া, ও ধামরাই অঞ্চলের ইটভাটা গুলো এখানে ইটের দাম গ্যাস ইটের চেয়ে তুলনামূলক অনেকটাই কম।
সাভার উপজেলা হিসাব বলছেন সাভার রাজস্ব আদেশে আওতায় ১৫৪ টি ইটভাটা রয়েছে আর আশুলিয়া রাজস্ব আওতায় রয়েছে ৭০ টি ভাটা সাভার উপজেলায় মোটভাটার সংখ্যা দাঁড়ায় ২২৪ টি প্রায়। (তথ্যসূত্র জাগো নিউজ)
বেশিরভাগের নেই কোন সরকারি অনুমোদন।

সবুজ গ্রাম আর নেই
সাভার ও ধামরাই আগের মতোন পরিবেশ নেই। সাভার ধামরাই সেই সবুজ গ্রাম গুলোর রূপ আগের মত আর দেখা যায় না। দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলী জমি হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের ঐতিহ্য আর চেনারূপ। সাভার উপজেলায় ইটভাটা আশেপাশে ফসলি জমি নেই বললেই চলে। মাটিখেকো ও প্রভাবশালীদের ভয়ে স্থানীয় জনগণ ও কৃষক মুখ খুলতে অনেকটা নারাজ । এইসব মাঠিখেকোরা উচ্চ দামে মাটি ফসলি জমি থেকে কেটে ইটভাটা মালিকদের কাছে বিক্রি করত।

ইটভাটা গুলো চলত কিভাবে
অনুসন্ধানে উঠে আসে বিভিন্ন সরকারি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলোতে ধরা হতো চাঁদা। গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে এইসব ইটভাটা থেকে তোলা হত চাঁদা , তাছাড়া এসব ইটভাটা মাসে বরাদ্দ থাকতো চাঁদা । এভাবে তারা প্রশাসনে নাকের ডগায় কার্যক্রম চালিয়ে যেত বছরের পর বছর। আগেও মহামান্য আদালত নির্দেশ ছিল অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার জন্য কিন্তু দলীয় সরকারের কারনে অনেক আমলাদের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেন নাই।
অন্তবর্তী কালীন সরকারের সময় আদালতের নির্দেশ ও অতীতে বিভিন্ন পরিবেশবিদরা বিভিন্ন সংস্থার একাধিক রিটের কারণে এবারে নড়েচড়ে বসেছে বিভাগীয় পর্যায়ে থেকে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসন। আর এগুলোতে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য মাঠে কাজ করছে যাচ্ছেন সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটণগ।

অভিযানের জন্য নেই কোন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা
আদালতের নির্দেশে মাঠে কাজ করছেন সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা একদিকে যেমন লোকবল সংকট তেমনি অন্যদিকে সংকট রয়েছে ৭ লোবেট ভেকু। হঠাৎ করে সেভেন লোবেট ভেকু পাওয়া যায় না। ইটভাটার আগুনের চুল্লি গুলো এত উপরে এবং এত শক্তিশালী যে অন্য বেকু দিয়ে ভাঙ্গা সম্ভব নয়।
বর্তমানে পর্যাপ্ত জনবল, পুলিশ, ও ভেকু ও কিছু কিছু ইটভাটা একেবারে নদীর ধারে ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় হওয়ার কারণে কিছুটা প্রভাবশালীদের কারণে এসি ল্যান্ডে সহ অভিযানে লোক বলে নিরাপত্তাঝুঁকিতে রয়েছে।

সাভার ও আমিন বাজার রাজস্ব সার্কেলের অধীনে আদালতের নির্দেশে বাস্তবায়ন করার জন্য মাঠে নেমেছেন সহকারী কমিশনে ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। গতকাল ও আজ সাভার ভাকুর্তা সলমাসি ও আমিনবাজার সোনারবাংলা ইটভাটা তাছাড়া আমিনবাজারে আরো দুইটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলম ও আমিনবাজার সহকারী কমিশনার ভূমি ও ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ বাসিত সাত্তার। শ্যালমাসীর, টোটালি পাড়া শ্যামলাপুর সাভার সবচেয়ে প্রভাবশালী তাহা ব্রিক্স শ্যামলাপুর সাভার এ কে এম তেতুলঝড়া,ঝাউচর ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হয় এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন সরকারি কমিশনার ভূমি জহিরুল আলম । অপরদিকে আমিন বাজারেও আদালতের নির্দেশের পর থেকে সাভার উপজেলার তিনজন এসিল্যান্ড ইটভাটা গুঁড়িয়ে মহামান্য আদালতের নির্দেশ মানতে মাঠে নেমেছেন।
মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং: ১৩৭০৫/২০২২ এর আদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের নির্দেশনায়।