আজ মঙ্গলবার, ১লা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজধানীতে নাশকতার আশংকা

editor
প্রকাশিত মার্চ ২৯, ২০২৫, ০৬:৩৩ অপরাহ্ণ
রাজধানীতে নাশকতার আশংকা

Sharing is caring!

টাইমস নিউজ 

 

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৯ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। লম্বা এই ছুটিকে ঘিরে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুলিশের গোয়েন্দা রিপোর্টেও এধরনের তথ্য উঠে এসেছে।

এমন পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

বিশেষ করে ঈদের জামাতকে ঘিরে যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি প্রতিরোধে নেওয়া হয়েছে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতি ঠেকাতে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, আনসার এবং গোয়েন্দা সংস্থাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘পুলিশ নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করলেও বাসা-বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দীর্ঘ ছুটিতে অনেকেই ঢাকা ছাড়বেন, তাই বাসার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।’

 

পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে— এবারের ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। পুলিশের সব ইউনিটের সদস্যদের ছুটি বাতিল করে ঈদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ডিউটি দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরও মাঠে নামানো হয়েছে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। কিছু অসাধু চক্র রয়েছে, যারা নাশকতা সৃষ্টির সুযোগ খুঁজছে। ঈদ উৎসব ঘিরে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে শুধু নিয়মিত টহলেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বরং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোয়েন্দা কার্যক্রমও বাড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা দেখেছি, ঈদকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি শহরে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। এবার সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের আগেভাগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এরমধ্যে সরকার পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে একটি শ্রেণি নাশকতার সৃষ্টির জন্য ওঁত পেতে আছে। জনসাধারণকেও সচেতন থাকতে হবে, সন্দেহজনক কোনও কিছু নজরে আসলে দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে পুলিশকে সহায়তা করা যেতে পারে।’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘এবারের ঈদে মহাসড়কের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কিছুটা দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে যাত্রীরা ডাকাতির কবলে পড়তে পারেন। এছাড়া ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে ঈদের ঘরমুখো মানুষ বাসা থেকে বাস, রেল ও লঞ্চ টার্মিনালে যাওয়ার পথেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারেন।’

তবে পুলিশ জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে নগরের প্রতিটি বাস, রেল ও লঞ্চ টার্মিনালে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে।

ফাঁকা ঢাকায় চুরি-ডাকাতির আশঙ্কা

অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘এবার ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা মহানগরী। শহরের অনেক বাসা-বাড়ি ফাঁকা থাকবে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে— যা অপরাধীদের জন্য সুযোগ করে দিতে পারে। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঝুঁকি রয়েছে। তাই এলাকাভিত্তিক তরুণদের সঙ্গে নিয়ে কমিউনিটি নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। সারা বিশ্বেই এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি।’

 

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বড় উৎসব বা ছুটির সময় অপরাধ বাড়ার প্রবণতা রয়েছে। এ সময় অনেক অপরাধীচক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়। তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কমিউনিটির তরুণদের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। অতীতে বিভিন্ন সংকটময় সময়ে মহল্লাভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে। ৫ আগস্টের পরপর আমরা দেখেছি— তরুণরা কীভাবে মহল্লায় পাহারা দিয়েছে। ফলে তাদের যুক্ত করা গেলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া অপরাধ প্রতিরোধে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা, আধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য হেল্পলাইনগুলোর কার্যকরিতা বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে বাসাবাড়ির নিরাপত্তায় ফ্ল্যাট অ্যাসোসিয়েশন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সমন্বিত উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

 

এবারের ঈদে রাজধানীর নিরাপত্তায় প্রথমবারের মতো পুলিশের সঙ্গে মাঠে থাকবে ৪২৬ জন অক্সিলারি পুলিশ। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এলাকার নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্য থেকে বাছাই করে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হলেও তারা কোনও তদন্ত করতে পারবে না। অপরাধীদের গ্রেফতারের পরপরই সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করতে হবে।

বুধবার (২৬ মার্চ) ভোরে ধানমন্ডির অলংকার নিকেতন জুয়েলার্সের মালিক এম এ হান্নান আজাদের বাসায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা র‍্যাবের পোশাক পরে নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট ও ছাত্র পরিচয় দিয়ে বাসায় প্রবেশ করে। বাসার মালিক ৯৯৯ নম্বরে কল করলে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পাশের ভবনের নির্মাণ শ্রমিকদের সহায়তায় পুলিশ চারজন ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়।

 

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, সাহসিকতার জন্য ছয় জন শ্রমিককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে এবং তাদের অক্সিলারি ফোর্সে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া শাখার উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। নগরবাসী যেন নিশ্চিন্তে উৎসব উদযাপন করতে পারেন, সে জন্য প্রতিটি থানা ও বিশেষ ইউনিট সমন্বিতভাবে কাজ করছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বাড়ানো হয়েছে টহল, বসানো হয়েছে চেকপোস্ট এবং স্থাপন করা হয়েছে নজরদারি ক্যামেরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সন্দেহজনক কিছু নজরে এলে দ্রুত পুলিশের হেল্প লাইন নম্বরে জানান। ঈদকে কেন্দ্র করে সক্রিয় বিভিন্ন প্রতারক চক্র ও অপরাধীদের প্রতিহত করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধিও গুরুত্বপূর্ণ।’

 

ঈদের ছুটির সময় ডিএমপি ও র‍্যাব যৌথভাবে রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে। অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনাল, বিনোদনকেন্দ্র, বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন স্থানে কড়া নিরাপত্তা থাকবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা নগরবাসীর পাশে আছি। তবে নাগরিকদেরও সতর্ক থাকতে হবে। যেকোনও সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড দেখলে দ্রুত পুলিশকে জানান। আমাদের ব্যবস্থাপনাটা আমরা করবো।’

 

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও রেলওয়ে পুলিশকে বিশেষভাবে সক্রিয় করা হয়েছে। সারা দেশে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও প্রতারণা প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নগরবাসী ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ সদস্যরা দিনরাত কাজ করছেন। জনগণের প্রতি অনুরোধ— যাত্রাপথে সতর্ক থাকুন, মূল্যবান সামগ্রী সুরক্ষিত রাখুন এবং যেকোনও সমস্যা হলে দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সবার সহযোগিতা থাকলে ঈদের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’