Sharing is caring!
সংক্ষেপে কাহিনীটা বলি । দীপাল বড়ুয়া শুরুর কয়েকজনের একজন গ্রামীণ ব্যাংকার। ড. ইউনূসের ছাত্র। ১৯৭৬ মর্টগেজ ছাড়া ঋণ কার্যক্রম পরীক্ষাকালে সকল অনিশ্চয়তায় এরা ড. ইউনূসের সংগী হয়।
দীপাল বড়ুয়া, শামীম আনোয়ার, শেখ আবদুদ দাইয়ান, জান্নাত কাওনাইন, নুরজাহান বেগম, আসাদ এরা সব চিটাগাং ইউনিভার্সিটির ছাত্র। প্রচন্ড কষ্ট করেছে এরা। বাহির থেকে এডিশনাল সেক্রেটারী খালেদ শামস ডিএমডি হন পরে, এক জজ এর ছেলে ড. ইউনূসের বন্ধু মোজাম্মেল হক সুপার গুড ম্যান, হন জিএম, চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার মাহবুবুল হক চৌধুরী, হন পরিচালক প্রশাসন, আরো বহু লোক নেয়। একাডেমিশিয়ান ড. ইউনূস উন্নত ব্যবস্থাপনা জানেন, তবে ভুল ধারনা মজ্জাগত। দীপাল বড়ুয়া বেশি অনুগত ছিলেন। তাই তাঁকে ডিএমডি করা হয় ও পরের এমডি করার জন্য যারা তার চেয়ে যোগ্য বা উপরের পদে, তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয় অসময়ে। বিদেশ ঘুরিয়ে, বড় সব দায়িত্ব দিয়ে দীপাল বড়ুয়াকে যোগ্য করে তোলা হয়। সুদর্শন, স্মার্ট লোক দীপাল বড়ুয়া। সোলার কাজের গ্রামীণ শক্তিরও এমডি করা হয় এক্সট্রা সুবিধা দিতে। সোলার সাফল্যের ওপর ইউএইর একটা ১০.৫০ কোটি টাকার পুরস্কারটাও দীপাল চন্দ্রকে ব্যক্তিগতভাবে পাইয়ে দেয়া হয়। এটা আসলে প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার ছিল, ইউএইকে বুঝতে না দিয়ে নিজ নামে চেকটি নেন দীপাল বড়ুয়া, ড. ইউনূস নিশ্চয় বলেছেন। জোবরা গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে আসা দীপাল বড়ুয়া এমডি হতে রেডি, যোগ্যও, পরিশ্রমিও।
কিন্তু ড. ইউনূস এমডি পদ ছাড়ছেন না। দীপাল বড়ুয়ার বয়স ৬০ হতে বাকী নেই, তবুও ড. ইউনূস এমডি পদ ছাড়ছেন না ৭০ বয়সেও। আগেই গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে যেতে পারতেন, ১/১১ সরকারের সময় বন্ধু ফখরুদ্দিন সরকার প্রধান, যেভাবে চাইতেন আইন করা যেত। নির্বাহী ক্ষমতা ছাড়তে রাজি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মে এমডি পদে সর্বোচ্চ বয়স ৬০। তাহলে? ড. ইউনূস নিজেকে আইনের উর্ধে ভাবতেন। নোরাদ ৪০০ কোটি টাকা অন্য খাতে সরানো তার কারণ।
একবার ড. ইউনূস বিদেশে দীপাল বড়ুয়া কর্মচারী সুবিধাও জারি করে দিলেন যা করার কথা এমডির। ড. ইউনূস এসে এটা শুনে ডেকে নিলেন তাঁকে। দীপাল বড়ুয়া রেগেই বললো, ‘আমাকে এমডি বানাবেন, তো আপনি পদটা না ছাড়ছেন না কেন? আমার বয়স তো ক্রস করছে, আপনি কবে ছাড়বেন’ – মুখের উপরে এমন কথা! অধীনস্ত থেকে এমন শুনতে অভ্যস্ত না তিনি। ১০.৫০ কোটি টাকা পাওয়ায় দীপাল বড়ুয়ার আনুগত্যও আগের মত না। আগেই একটা ছোট ৫-তলা বাড়ীও করেছেন।
বেশ, ড. ইউনূস তাঁকে বের করে দিলেন সব পদ থেকে। সেটাও বোধ হয় ঠিক করেননি। প্রচন্ড রেগে গেল দীপাল বড়ুয়া।
বেশ, নোরাদ ৪০০ কোটি টাকার কাহিনী সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানের “আমাদের সময়” পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশ হতে থাকে। দীপাল বড়ুয়া ড. ইউনূসের গোপন সব জানেন। সব প্রকাশ হতে থাকে। নাঈমুল ইসলাম টাকার বিনিময়ে তা করে বলে অনুমান করা যায়। তিনিও খুব ভাল লোক না। সেই ১০.৫০ কোটি টাকা যা ড. ইউনূস অনিয়ম করে দীপাল বড়ুয়াকে পাইয়ে দিছিলেন সে টাকাই দীপাল বড়ুয়া ড. ইউনূসকে বেইজ্জতি করার কাজে লাগাচ্ছিলেন। একজন মন্ত্রীর পকেটেও সে টাকা গিয়ে থাকতে পারে যার থেকে শেখ হাসিনাকে ক্ষেপানো হয়।
ড. ইউনূস নিজেকে দেশের এক নম্বর ব্যক্তি মনে করতেন। তেমন ভাব, প্রকাশ আমার বইতে আছে। কোন একটা আলোচনায় নাকি বলে ফেলেছেন এমন একটা কথা যে শেখ মুজিবকে দুনিয়ার কয়জনে চিনেন! শুনেছেন এক জিএম যিনি কট্টর আওয়ামী লীগ । গেছে দীপাল বড়ুয়ার কানে। তখন দীলীপ বড়ুয়া মন্ত্রী। দীলীপ বড়ুয়ার স্ত্রী নাকি দীপাল বড়ুয়ার স্ত্রীর বান্ধবী। সে সুত্রে কথা গেল শেখ হাসিনার কানে। শুরু হলো এতদিন বেশি সময় এমডি পদে থাকা নিয়ে তদন্ত। দীপাল বড়ুয়া প্রতিশোধ নিতে মরিয়া। শীর্ষ গুরুকে বধ করবেই।
শেখ হাসিনা এটাতে সিরিয়াস হওয়ার তেমন কারণ ছিল না। ড. ইউনূসের নিজের উদ্ভাবিত ব্যাংক, নিজের মত করে চালাতে বরং সহায়তা করতে পারতেন। ড. ইউনূস ১৯৭৩/৭৪ আওয়ামী বিরোধী, বিএনপি পন্থি কিছুটা। তা হোক, তাতে শেখ হাসিনার কি? এরকম অপ্রয়োজনীয় জেদ শেখ হাসিনা ও তাঁর দলকে ধ্বংস করেছে। রাষ্ট্র রাজনীতি যারা করে তারা সব বিষয়ে সিরিয়াস হতে নেই। আবার জনগণের দরকারে ছোট বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হয়। শেখ হাসিনা বেশি রকম জেদ দেখিয়েছেন।
তখন সরকারের সোলার বাজেট ও উন্নয়ন ফান্ড বিরাট। দীপাল বড়ুয়ার একটা সোলার কোম্পানী সে ফান্ড নিয়মিত পায়। খরচ করতে ১০.৫০ কোটি ছাড়াও টাকার অভাব নাই।
বেশ যা হওয়ার হলো।
আমি তখন ড. ইউনূস পক্ষে লিখে বলেছি, (আমি যার বেলায় যা সত্য তাই বলার অভ্যাস) শেখ হাসিনা বাড়াবাড়ি করছেন, ড. ইউনূসকে হয়রানী করা ঠিক হচ্ছে না। এটা ফেসবুকে লিখলে আমার বিরুদ্ধে এমপি শাওন ও তাপসের লোকরা শেখ হাসিনাকে মানহানির মামলা করে। আদালত আমাকে জেলে পাঠায়নি, দুই বছর হাজিরা দেই। ২০১৮ নির্বাচনের আগে জেলে পাঠাবে মনে হওয়ায় দেশ থেকে চলে যাবার সুযোগ নেই। শিসেল্স থাকি।
শেখ হাসিনা নোবেল প্রাইজ পায়নি ড. ইউনূস পাইছিল, এটার জন্য ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অনবরত লেগেছিলেন, এটা সঠিক না মোটেই। আসলে ড. ইউনূস বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটু কথা বলেছেন। সেটা আসল কারণ। সম্ভবত মার্কিন লবিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নিয়মিত বলতেন। ড. ইউনূস দেখা করতে চাইছিল শেখ হাসিনার সাথে, মার্কিন এমবাসাডর মরিয়ার্টিও দেখা করতে চাইছিল, দেখা হলে মিটমাট হতো, শেখ হাসিনাও প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রতিহিংসা পরায়ন হয়েছিলেন। আমেরিকার সাথে এরকম ব্যবহার করে বাহবা নেয়া কতটা কাল হলো বুঝতে পারলো? তাই শেষে পচা শামুকে ঠ্যাং কাটা গেল। রাজনীতিক এতটা ঠুনকো বিষয়ে এত সিরিয়াস হতে নেই। আমি বার বার বলি, রাজনীতিকরা সব ঘটনার প্রতিশোধ নিতে নেই জনগণকে ভেবে। অনেক ঘটনা দুর্ভাগ্য বলে চুপ থাকতে হয়। ড. ইউনূস অর্থলোভি না, সম্মানের লোভি। সম্মান দেখালে হাসিনার সহায়ক হতো। ১৯৯৬ সরকার সময়ে তা করেছিলেন।
আমি এখন ড. ইউনূসের বিপক্ষে লিখি তিনিও শেখ হাসিনার চেয়ে বেশি প্রতিহিংসা প্রকাশ করেছেন, ৭১- ও বঙ্গবন্ধু মুছে ফেলতে চান, আগের ভাল কথাগুলোর উল্টো কাজ করে ক্ষমতার লোভে দেশটা লন্ডভন্ড ও জংগিদের ক্ষমতা নেয়ার অনুকুল অবস্থা তৈরী করছেন বলে মনে হওয়ায়। তাঁর জেদ মনে হয় শেখ হাসিনার চেয়ে বেশি। রক্ষার জন্য আমি সেই আওয়ামী লীগ ছাড়া শক্তিমান কাউকে দেখিনি। আমি বরাবর বঙ্গবন্ধু ভক্ত। তাই আওয়ামীরা আমার বিরুদ্ধে হয়রানীর মামলা করলেও আমার লেখা তাদের পক্ষে যায়। সত্য ও রাজনীতি এরকমই। ৭১-এর স্বাধীনতার চেয়ে বড় কিছু নেই।
দীপাল বড়ুয়া কোথায় আমি জানি না। গ্রামীণ ছাড়ার পর আমরা “গ্রামীণ বাংলা হাউজিং লিঃ” বলে একটা আবাসন কেম্পানী করি। আমি তার এমডি ও দীপাল বড়ুয়া চেয়ারম্যান ছিল। পরে আমি সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সানসিটি ডেভেলপার্স লিঃ করি। ড. ইউনূস ৫ আগষ্টের পর আবার দীপাল বড়ুয়ার ওপর প্রতিশোধ নেয় কি না, সেটা আমরা বলাবলি করছিলাম। দীপাল বড়ুয়া আবার পরিস্থিতিতে উপরে নীচে নামার চরিত্রবান লোক। তাই ম্যানেজ করে ফেলতে পারেন।
ড. ইউনূসের ভুল ধারনা মজ্জাগত কেন বল্লাম? তিনি জয়সাগর মৎস্য খামারে যেতেন। রেষ্ট হাউসে থাকতেন। আমরা একই ক্যাম্পাসে পরিবারসহ থাকতাম। রাতে আলোচনা হতো। বিশাল মৎস্য হ্যাচারী চালাতো কীটতত্ত্ব থেকে পাশ করা আতাউর। তিনি বলতেন, ফিশারী পাশ না করেই আতাউর এত বড় হ্যাচারী চালায়, বুদ্ধিমত্তা থাকলে একজন সব কাজই করতে পারে। তাই অনেক টেকনিক্যাল কাজ করতো নন-টেকনিক্যালরা। প্রফেশনালরা করলে কতটা ভাল করতো তা মানতে রাজি হতেন না।
এটা নিশ্চিত, হাসিনা-ড. ইউনূস দ্বন্দ্ব নোবেল প্রাইজ নিয়ে নয়। ড. ইউনূস খারাপভাবে কয়েকজনকে বের করে দেন। দীপাল বড়ুয়াকে করতে গিয়ে ধরা খান।
৩১/০৩/২০২৫
সরদার আমিন ; প্রকৌশলী , লেখক । ড . ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বই লিখেছেন