আজ বৃহস্পতিবার, ১৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারতের সঙ্গেও আলোচনার সুযোগ রেখেছে সরকার

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ৯, ২০২৫, ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারতের  সঙ্গেও আলোচনার সুযোগ রেখেছে সরকার

Sharing is caring!

টাইমস নিউজ 

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে উল্টো সুরে কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ভারতের সহযোগিতা নিয়ে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার নীতিগতভাবে সম্মত ছিল। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের সময়ে তিস্তা প্রকল্পে চীনা কোম্পানির অংশগ্রহণকে স্বাগত জানায় সরকার। তবে সরকার এ বিষয়ে উদারনীতি গ্রহণ করেছে এবং এ প্রকল্প নিয়ে ভারত বা চীন উভয়ের সঙ্গেই আলোচনা করার সুযোগ থাকবে।

তিস্তা প্রকল্পে চীনা কোম্পানির স্বাগত জানানোর অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, অগ্রগতি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা ঝট করে কোনও কিছু প্রত্যাশা করছি না যে কালকেই কেউ তিস্তা সমস্যার সমাধান করে দেবে। চীনের সঙ্গে আমাদের একটি আমব্রেলা চুক্তি আছে নদীর পানি নিয়ে। নদীর পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সবার জন্য এবং আমাদের জন্য বিশেষ করে। তিনি বলেন, আমরা ওপেন আছি। ভারতের সঙ্গেও সহযোগিতা সম্ভব, চীনের সঙ্গেও সম্ভব। কোনোটাতেই বাধা নেই। আমরা দেখবো যে কোন প্রজেক্টে কোথা থেকে সহায়তা নিলে আমাদের সুবিধা হবে। সে অনুযায়ী পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করবে।

চীন সফরের বিষয়ে তিনি বলেন, চীনে কিছু কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলে অন্যান্য পর্যায়ে সম্পর্ক আগানো সহজ হয়। দুই নেতার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু কাগজপত্র সই হয়েছে। আমার মনে হয় সফরটি মোটামুটিভাবে একটি প্রভাব রাখতে পেরেছে। ভারত ভিসা বন্ধ রেখেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেনন, ভারত ভিসা দেবে কি না, সেটা তাদের বিষয়। তবে ভিসার জন্য কোনো শূন্যতা থাকে না, মানুষ অন্য কোনো দেশে সমাধান খুঁজে নেয়।
ইতালির ভিসা পেতে বাংলাদেশিরা বিক্ষোভ করছেন। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ইতালির ভিসা নিয়ে দেশটির সঙ্গে অব্যাহতভাবে আলোচনা করছি। তবে ভিসা পেতে যেসব ডকুমেন্ট দেওয়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ইতালির ভিসার জন্য অনেক অবৈধ কাগজপত্র দেওয়া হয়। তারা (ইতালি) দেখছে, আসলেই সেই কাগজপত্র ঠিক আছে কি না। অনেক লোকজনের কাগজপত্র জেনুইন আছে, তারাও এখন এই অবস্থায় ভিসার জন্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

এদিকে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। তবে রাখাইনের যে অবস্থা তাতে করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা চেয়েছি তাদের মুখ থেকে কথা আসুক। তারা স্পষ্ট করেছে, আড়াই লাখের মধ্যে তারা এক লাখ ৮০ হাজার তারা ক্লিয়ার করেছে এবং বাকি ৭০ হাজারকে তারা রিভিউ করছে। আমরা সেইসঙ্গে তাদের কাছে দাবি জানিয়েছি, আরও ৭-৮ লাখ যেটা আছে সেটা যেন তারা ত্বরান্বিত করে। এই তালিকা অ্যাপ্রুভ করা মানে এই নয় যে, কালকে তারা চলে যেতে পারবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রত্যাবাসন নির্ভর করবে গ্রাউন্ড রিয়ালিটির ওপর। রাখাইনে বাস্তব যে অবস্থা সেটা আমরা জানি। এই অবস্থায় তাদের প্রত্যাবাসন করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ সবাই মিলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক এবং নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে যেন তারা যেতে পারে।

মিয়ানমার জানিয়েছে, তালিকাভুক্ত ৮ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার যোগ্য বলে নিশ্চিত করেছে দেশটি। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমানকে এ কথা বলেছেন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী উ থান শোয়ে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে গত শুক্রবার বৈঠক করেন তারা।

২০১৮ থেকে ২০২০ সালে ছয় ধাপে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের তালিকা দিয়েছিলে বাংলাদেশ। সেখান থেকেই এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শনাক্ত করেছে নেপিদো। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার নাম ও ছবি চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে আছে। এছাড়া আরও সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই জরুরি ভিত্তিতে করবে বলেও আশ্বস্ত করেছে জান্তা সরকার।