Sharing is caring!

নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তুললে সরকার পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ‘দোহাই’ দেয় বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
আজ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। ‘জুলাই, পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে’ এই সমাবেশের আয়োজন করে ইনকিলাব মঞ্চ।
সারজিস বলেন, আজ শাহবাগে এই উন্মুক্ত প্রান্তরে তাঁরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেটা ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে পূরণ হওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই তাদের কাছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তারা আমাদের পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির দোহাই দেয়।’
এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘যখন শাপলা চত্বর, পিলখানা এবং জুলাইয়ে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কোথায় ছিল?’
তবে সারজিস আলম তাঁর বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নিয়ে এই অবস্থান ব্যক্তকারী হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা উপদেষ্টা কিংবা পশ্চিমা কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি।
এ সময় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে সারজিস বলেছেন, ‘এই জেনারেশনকে (প্রজন্ম) ভয় করুন। যদি এই জেনারেশনের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আবেগ নিয়ে খেলা করেন, তাহলে এই জেনারেশন সকল ক্ষমতার বিপক্ষে গিয়ে যে কাউকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারে।’
এই সমাবেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সহসমন্বয়ক মোসাদ্দেক ইবনে আলী বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে, তারা বিদেশি দূতাবাসগুলোর কাছে নিজেদের শির দাঁড়া বিক্রি করে দিয়েছে।
দল গঠনের পর তারা দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়, কিন্তু কোথাও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা ছিল না। এই সরকারের ঘুড়িটা অন্তর্বর্তীকালের মধ্যে ঘুরলেও তার নাটাইটা বিদেশি কোনো দূতাবাসের হাতে রয়েছে।
সরকার কোন কোন বিচার করছে এবং সেটা কতখানি হয়েছে, তা স্পষ্ট করে বলার দাবি জানান এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি বলেন, পৃথিবীতে অনেক ফ্যাসিবাদী দলকে চিরস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের নজির আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সেই নিয়মেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
সমাবেশে জুলাই অভ্যুত্থানে পা হারানো রিফাত হাওলাদার বলেন, ‘আজ আমি একটি পা নিয়ে বলতে চাই, আমার মতো আর কোনো ভাইয়ের পা না হারাক। যত দিন বেঁচে থাকব, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’
জুলাইয়ে সহিংসতায় চোখ ও পায়ে আঘাত পাওয়া ইমদাদুল বলেন, ‘আমি যখন দেখতে পাই, আওয়ামী লীগ নামক হায়েনারা রাস্তায় মিছিল করে, তখন আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবে, বাংলাদেশে তাদেরও বিচার নিশ্চিত করা হবে।’
১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে শহীদ হওয়া সায়েমের মা বলেন, ‘একজন মা জানে, সন্তান হারানোর বেদনা কী। আমার ছেলেকে পাখির মতো গুলি করে মেরেছিল। আজ ৯ মাস পরেও ছেলে হত্যার বিচার কেন হয়নি? আমার একটাই দাবি, শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটিতে এনে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক।
বাংলার মাটিতে চিরদিনের জন্য আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলে ছেলেকে হারানোর বেদনা কিছুটা মলিন হবে।’
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ মেজর তানভীরের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামীকে আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কখনো শুনেছি তাঁকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, কোথাও শুনেছি তাঁকে গুম করে নিয়েছে। কিন্তু আজও আমার স্বামীর সন্ধান পাইনি। তাঁর কবরের সন্ধানটুকু পাইনি। ১৬ বছর ধরে আমরা নিপীড়িত আওয়ামী লীগের কারণে।’
সমাবেশে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) প্রধান উদ্যোক্তা আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগ এই দেশে রাজনীতি করতে পারবে না।
জুলাইয়ে আমরা আওয়ামী হায়েনাদের ভয় পাইনি। সুতরাং এখনো কোনো অপশক্তি আমাদের থামাতে পারবে না। সরকারকে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। অন্যথায় আপনাদের টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে।’
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, গত ১৬ বছরে যতগুলো হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো তার কোনোটির বিচার করতে পারেনি।
আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, অনতিবিলম্বে এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নই। আমার পরিবারের কেউ শহীদ হয়নি। কিন্তু আমরা প্রতিজ্ঞা করছি, ইনকিলাব মঞ্চের একজন সদস্য বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করে ছাড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শহীদ জিয়ার বিএনপি, সাঈদী-নিজামীদের জামায়াতে ইসলামী কিংবা জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত এনসিপিকে দিল্লির দাসত্বে আটকাতে দেব না। ইনকিলাব মঞ্চ রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত প্রতিবাদ করে যাবে।’
এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে আগামী ১০০ দিনের মধ্যে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ, শাপলা গণহত্যার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও জাতিসংঘের সহায়তায় শহীদদের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ ও বিচার নিশ্চিত করা, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ এবং সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ বিচারের বিষয়ে স্পষ্ট ধারা উল্লেখ করার দাবি জানানো হয়।
ওসমান হাদি হুঁশিয়ার করে বলেন, আগামী ১০০ দিন ৬৪ জেলায় গণসংযোগ করবে ইনকিলাব মঞ্চ। যদি এই সময়ের মধ্যে সরকার কার্যকর কোনো ভূমিকা না নেয়, তাহলে আগামী ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) শাহবাগ থেকে ‘মার্চ ফর বাংলাদেশ’ কর্মসূচি থেকে সচিবালয় ঘেরাও করা হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি শেখ মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, জুলাই অভ্যুত্থানে রাজধানীর বনশ্রীতে শহীদ হওয়া মুসলেহ উদ্দিনের স্ত্রী, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ, শাপলা চত্বরে নিহত রিয়ানের বোন সোভা, কবি সাম্য শাহ প্রমুখ।