ইসহাক খান
২১ নভেম্বর ছিল সশস্ত্র বাহিনী দিবস। সেনাকুঞ্জে বিশাল অনুষ্ঠান হলো। সেখানে গিয়েছিলাম সস্ত্রীক। মানে শ্যামলী খানসহ । আমি বুঝতে পারলাম না আমাকে কেন, কি কারণে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলো? সেটা কি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে? নাকি লেখক হিসেবে? সত্যি আমি অবাক হয়েছি। গত ৫৩ বছরে এই জাতীয় অনুষ্ঠানে আমাকে কখনও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। না গণভবনের কোন অনুষ্ঠানে-না সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কোন অনুষ্ঠানে।
বস্তুত আমি কোন সরকার পক্ষের কেউ না। বরং এই সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আচরণে আমি বেশ ক্ষুব্ধ। যা হোক, যাবো না যাবো না করেও শেষ পর্যন্ত গেলাম।
গিয়েতো আমি হতবাক। বিশাল আয়োজন। এত ধনী মানুষ এদেশে। আমন্ত্রিত অতিথিদের ভেতর আমি একমাত্র ব্যক্তি যে সিএনজিতে গেছি। বাকি সবারই দামী দামী গাড়ি।
শুরুতে একটু মন খারাপ হলো। এত মানুষ, কাউকে চিনি না। মনে হলো, অচেনা কোন অরণ্যে এসে পড়েছি। ধীরে ধীরে মনটা হাল্কা হতে থাকে। চেনা মানুষ পেতে থাকি। আড্ডা জমে ওঠে। দেখা হয় নারী উদ্যোক্তা আসমা আজগরের সংগে। তার সংগে মূলত শ্যামলীর মাধ্যমে আমার পরিচয়। আসমা আজগর আমাদের পেয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়ে গল্প শুরু করলেন। পরিচয় হলো তার স্বামী লে. কর্নেল সালাউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়ার সঙ্গে। এমন আরও একজন ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা। বেগম রাশিদা। তিনি একজন কর্নেলের স্ত্রী। গল্প হলো একুশের টিভির কর্ণধার আব্দুস সালাম সাহেবের সঙ্গে। এই চ্যানেলে আমি অনেকগুলো ধারাবাহিক নাটক লিখেছি। এর মধ্যে তিনটি ধারাবাহিক ছিল দীর্ঘ। সেই সূত্র ধরেই আমাদের কথা জমে উঠলো। খানিক আড্ডা হলো চিত্রনায়ক আলমগীরের সঙ্গে। অল্প অল্প আড্ডা হলো দৈনিক ‘মানবজমিন’ পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে। দেখা হয়ে গেল কবি ফারহানা রহমানের সঙ্গে। দীর্ঘ আড্ডা হলো তার সঙ্গে।
বেশি ভাললাগলো বন্ধু অভিনেতা, প্রামাণ্য চিত্রনির্মাতা কাউসার চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হয়ে। কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক নাঈমা খানমের সঙ্গে দেখা হওয়াটা ছিল অতি আনন্দের ব্যাপার। তার মাধ্যমে পরিচয় হলো তার ছোটভাই, বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার আব্দুল মুকিত খানের সঙ্গে। গোটা অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ছিল তার উপর। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে কর্মরত। অভিনেতা টুটুল চৌধুরী এবং তার স্ত্রী হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি সালমা ডলির সংগে দেখা হওয়াটা ছিল বাড়তি পাওয়া। টুটুল আমার লেখা একটি ধারাহাহিক নাটক ‘টমটম’এ অভিনয় করেছে। এ ছাড়া খন্ড নাটকেও সে অভিনয় করেছে।
আরও অনেককে দেখেছি দূর থেকে। হাল আমলের কয়েকজন কমবয়সী উপদেষ্টাকে দেখেছি, দুজন সমন্বয়ককে দেখেছি। গণ অধিকার পরিষদের দুই নেতাকে দেখেছি, রুমিন ফারহানা ও মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীকে দেখেছি তিশাসহ।
বিকেল চারটায় প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ইউনুস এলেন অনুষ্ঠানস্থলে। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হলো। তার আগে এসেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
ডঃ ইউনুস তার বক্তৃতায় ৭১কে খুব গুরুত্ব দিলেন। তিনি বলেন, ‘২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী যৌথভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। সেই যুদ্ধ ১৬ ডিসেম্বরে এসে সমাপ্ত হয়। জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।’
তিনি ‘পাকিস্তানি’ হানাদার কথাটি বলেননি। বলেছেন হানাদার বাহিনী। তিনি পুলিশ এবং ইপিয়ার বাহিনীর নাম ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বলেননি। বলেননি বঙ্গবন্ধুর নাম। অন্য বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলেছেন। তাদের অবদানকে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু যৌথ আক্রমণে পরের তিন বাহিনীর কথা উল্লেখ করেননি। তবে শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধকে তিনি রিসেট বাটনে চেপে মুছে দিতে পারেননি। ধন্যবাদ তাঁকে এবং যিনি বা যারা আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাদেরকে।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com
Copyright © 2024 RED TIMES. All rights reserved.