Sharing is caring!
সালেহ আহমদ (স’লিপক):
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে টানা তিন সপ্তাহ পর আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ভারতীয় ইসকন কর্মীদের বাধায় গত ২৭ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি রপ্তানি বন্ধ ছিল চাতলাপুর বর্ডারে।
জানা যায়, ভারতীয় এলাকায় বিক্ষোভকারীদের অবস্থানের কারণে গত ২৭ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশি মাছ সহ অন্যান্য দ্রব্যাদি বহনকারী গাড়িগুলো ভারতীয় শুল্ক স্টেশন হয়ে কৈলাশ শহরে প্রবেশ করতে পারেনি। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা দুইদিন ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের মাছ রপ্তানি করতে পারেনি। পরে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে সিদ্ধান্তক্রমে দীর্ঘ ২১ দিন পর মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) থেকে চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় আবারো রপ্তানি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশনে গিয়ে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশ শহরের মনু শুল্ক স্টেশন দিয়ে মাছ এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি বহনকারী গাড়িগুলো ভারতের ঢুকতে দেখা যায়। সিএনএফ এজেন্ট রুবেল আহমদের ৪ গাড়ি মাছ এবং আরএফএল গ্রুপের প্লাস্টিকপণ্যের গাড়িগুলো ভারতে প্রবেশের জন্য চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশনের সামনে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
সিএনএফ এজেন্ট রুবেল আহমদ বলেন, গত ২৭ নভেম্বর এক্সপোর্ট বন্ধ হয়েছিল। ছয় গাড়ি মাছ নিয়ে এসেছিলাম। তখন ইসকনের কিছু বাধার সম্মুখীন হয়ে মাছ নিয়ে ভারতে ঢুকতে পারিনি। এমতাবস্থায় মাছ নিয়ে আমরা বিপদের সম্মুখীন হয়েছি। মাছগুলো ৪ দিন বরফ দিয়ে রেখে পরিস্থিতির কোন সুরাহা না হওয়ায় স্থানীয় বাজারে কিছু মাছ সেইল দিয়েছি। আমাদের অনেক মাছ নষ্ট হয়েছে। এতে আমাদের অনেক লোকসান হয়। গত ১৭ ডিসেম্বর আবারো আমদানি রপ্তানি শুরু হয়েছে। প্রতিদিন-ই আমার মাছ রপ্তানি হচ্ছে। এখন আর কোন অসুবিধা নেই। ২০ দিন বন্ধ থাকায় আমাদেরও ক্ষতি হয়েছে, দেশেরও ক্ষতি হয়েছে। যদি রপ্তানি করতে পারতাম ডলারটা আসতো আমার দেশে। আশাকরি আর বন্ধ হবেনা। ভারত আমাদের পাশ্ববর্তী বন্ধু রাষ্ট্র। আমরা চাই দুই দেশের বন্ধুত্বটা অটুট থাকুক। এতে দু’দেশেরই লাভ। আমরা চাই দু-দেশের সম্পর্ক অটুট থাকুক, ব্যাবসা অটুট থাকুক।
আমদানি রপ্তানিকারক সৈয়দ ইশতিয়াক উদ্দিন বাবেল বলেন, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন পোর্ট দিয়ে আমরা আমদানি রপ্তানি ব্যবসার সাথে জড়িত। বেশিরভাগ ব্যাবসায়ী-ই আমাদের পার্টনাশীপ, যেহেতু বড় ব্যবসা। আমরা বর্তমানে ফল আমদানি করছি, এটাও একটু ঝামেলার মধ্যে আছে। রানিং ব্যবসার মধ্যে চাতলাপুর বর্ডার দিয়ে আমরা মাছ রপ্তানি করি। বিগত ২৭ নভেম্বর মাছ রপ্তানি হঠাৎ করে বন্ধ হয় রাষ্ট্র্রিয় বা ধর্মীয় কিছু কারণ উল্লেখ করে। প্রায় ২০ দিন বর্ডার বন্ধ থাকার পর ১৭ ডিসেম্বর বর্ডার আবার চালু হয়। বন্ধকালীন সময়ে আমরা অর্থনীতিকভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আমরা চাই উভয় দেশের কুটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি হোক। এ সম্পর্কের উন্নতি না হলে উভয় দেশের-ই কমবেশি ক্ষতি আছে। রাজনৈতিক বা অন্য কোন সমস্যা যদি থেকে থাকে, আমরা একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আশা করবো আমাদেরকে যাতে আগে এটা নোটিশ করা হয়। বিগত ২০ দিন বন্ধ থাকায় আমরা লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। হঠাৎ করে বন্ধ হওয়ায় প্রথম দিন ভারতে আন্দোলনকারীদের জন্য কাচামাল মাছ রপ্তানি করতে না পেরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হয়তো আমরা বিক্রি করেছি, তা অনেক লসে। লসের পরিমানটার এখন সঠিক হিসাব আসেনি, আসলে হয়তো বলতে পারতাম। অনেকেই রাজনৈতিক বিষয়কে ধর্মীয় দিকে রূপান্তর করতে চায়, যা মোটেও কাম্য নয়। আমরা চাই পাশাপাশি উভয় দেশ, ধর্মীয় এবং জাতীয়তা ভিন্নতা থাকলেও, আমাদের মাঝে একটা আন্তরিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। আমরা চাই এটার উন্নতি হোক। উভয় দেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
বর্তমানে যে পরিস্থিতি তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে আছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, একবার খোলে আবার যদি বন্ধ হয় তাহলে আমাদের কাস্টমার যারা আছে তারা ছুটে যাবে। তাছাড়া অনেক বাকি আছে। ঐগুলোও আমরা মাইর খাই। আবার যদি ক্ষতিগ্রস্ত হই, তাহলে আমরা ঘুরে দাড়াতে পারবো না। চাতলাপুর বর্ডার দিয়ে মাছ রপ্তানি বেশি হচ্ছে। তাছাড়া প্লাস্টিকপণ্য, ড্রিংকস ইত্যাদি রপ্তানি হয়। আমদানিটা তামাবিল বর্ডার দিয়ে বেশি হয়। বিভিন্ন ঝামেলার কারণে আপাতত সবকিছুই একটু স্লো। প্রতি কেজি মাছ আমরা আড়াই ডলার করে রপ্তানি করছি। যেটা আমাদের সংকটময় অর্থনীতিতে বিশাল একটা ভুমিকা রাখবে ডলার সংকট মোকাবেলায়।
চাতলাপুর ঘাট এক্সপোর্ট ইনপোর্ট এসোসিয়েশন এর সভাপতি সুনীল শেখর দত্ত বলেন, আমাদের এই বর্ডারটা গত প্রায় ১৮/২০ দিন বন্ধ ছিল। এই বন্ধ থাকার কারণে আমাদের খুব ক্ষতি হয়েছে। এটা সরকারি কোন বন্ধ ছিলনা। পাবলিকের হাঙ্গামার কারণে এই বন্ধটা ছিল। আমি এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারপর উনি আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে বলেছেন, আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে এর একটা সমাধান করতে হবে। গত ১৬ ডিসেম্বর এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে জানানো হয়েছে এখন থেকে আবারও আমদানি রপ্তানি শুরু হয়েছে।
পূনরায় বর্ডার বন্ধ হওয়ার কোন লক্ষণ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কোন কারণে আবারো বর্ডার বন্ধ হয়, তাহলে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হব এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমরা মাছ রপ্তানি করি, যা পচনশীল। হঠাৎ বন্ধ হলে অবশ্যই ক্ষতির সম্মুখীন হব।
চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, গত ২৭ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালতাপুর শুল্ক স্টেশনে আমদানি রপ্তানি বন্ধ ছিল। প্রতিদিন ৭/৮টা গাড়ি এক্সপোর্ট হইতো। আইটেম থাকতো মাছ এবং প্রাণের কিছু গাড়িও যায়। দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ টন মাছ রপ্তানি হতো। যার মূল্য ৬০ থেকে ৬৫ হাজার ডলার। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তা-ই।