প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪, ১২:১২ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪, ৬:৩৫ অপরাহ্ণ
নাগরপুরে মাঠগুলো সরিষা ফুলের দখলে; মধু আহরণে ব্যস্ত মৌচাষিরা
এম.এ.মান্নান,নাগরপুর(টাংগাইল)সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ফসলের মাঠ এখন সরিষা ফুলে হলুদ রঙের সেজেছে। সে এক অপরূপ দৃশ্য। চোখ মেললেই মন জুড়িয়ে যায়। পুরো মাঠ যেন ঢেকে আছে হলুদ গালিচায়। ফুলে মৌমাছি আর প্রজাপতির নাচনে গ্রামীণ জনপদ হয়ে উঠেছে আরো মনোমুগ্ধকর। প্রকৃতি যেমন অপরুপ ভাবে সেজেছে, ঠিক সেই সঙ্গে মেতে উঠেছে পেশাদার মধু সংগ্রহে মৌয়ালরা। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে এসব জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছে এসব মৌয়াল। বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি বের হয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষার ফুলে ফুলে। এই অপরূপ দৃশ্যে যেকোনো প্রকৃতি প্রেমী মানুষকে আকৃষ্ট করবে। বেশির ভাগ মৌ চাষী এসেছেন সাতক্ষীরা, ফরিদপুর সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এই সরিষা থেকেই মিলছে খাঁটি তৈল, গরুর স্বাস্থ্যকর খাবার, খৈল, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সরিষার গাছ। সরিষা চাষে খরচও কম, তাইতো কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় উপজেলা জুড়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবার আরও ব্যাপকভাবে সরিষা চাষ হয়েছে। মৌমাছি সরিষার ফুলে ফুলে উড়ে মধু সংগ্রহ করে। এতে সরিষা ফুলে সহজেই পরাগায়ন ঘটে। সরিষাক্ষেতের পাশে মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করলে, সরিষার ফলন অন্তত ২০ শতাংশ বাড়ে। তৎসঙ্গে মৌচাষিরা মধু আহরণ করেও লাভবান।
সরেজমিন দেখা গেছে,উপজেলার গয়হাটা, ধুবড়িয়া, ভাদ্রা, মোকনা, দপ্তিয়র, মামুদনগর, বেকড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় মৌচাষীরা সরিষাক্ষেতের পাশে মৌ চাষ করছে। এসব জমিতে সরিষার ফুল ফুটেছে আরো সপ্তাহ দু-তিয়েক আগেই। ফুলের মধু আহরণে নেমেছেন, পেশাদার মৌয়ালারা। তাদের বাক্স থেকে দলে দলে উড়ে যাচ্ছে পোষা মৌমাছি, আর সংগ্রহ করছে মধু। মুখভর্তি মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা ফিরছে বাক্সে রাখা মৌচাকে। সেখানে সংগৃহীত মধু জমা করে আবার ফিরে যাচ্ছে সরিষা ক্ষেতে। এভাবে দিনব্যাপী মৌমাছিরা যেমন মধু সংগ্রহ করে। ফুলে ফুলে ঘুরে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে পুরো জমির পরাগায়নেও সহায়তা করে। এ মৌসুমে মৌয়ালরা পোষা মৌমাছি দিয়ে প্রচুর মধু উৎপাদন করে যেমন লাভবান হচ্ছেন ঠিক তেমনি মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনায় চাষিরাও বাড়তি আয়ের আশা করছেন। বর্তমানে মৌ চাষে প্রতি বাক্স থেকে সপ্তাহে ৪-৫ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে মধু সংগ্রহ বেশি হয়। ৩০টি বাক্সে ১২০ থেকে ১৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। মৌ চাষে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। মৌ চাষের কারণে একদিকে যেমন সরিষা উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে অল্প খরচে মৌ চাষ দূর করতে পারে বেকারত্ব।
মৌয়াল মো. আবুল কালাম সরদার(দোলন) (৫৫) জানান, আমরা প্রতি বছর সরিষা ক্ষেত থেকে অনেক খাঁটি মধু সংগ্রহ করে থাকি। এসব মধুর অনেক চাহিদা, বেশ ভাল দামে মধু বিক্রি করা যায়। আগে সরিষা চাষিরা মনে করতো যে এভাবে মধু সংগ্রহ করলে সরিষার ক্ষতি হয়। কিন্তু এখন তারা বুঝতে পেরেছে মধু সংগ্রহে সরিষার ফলন আরো ভাল হয়। আমি এবছর মোট ১৩০টি মৌ বাক্স নিয়ে এই স্থানে এসেছি। আমরা বেশিরভাগ মৌয়ালা মহাজন হতে অগ্রিম টাকা নিয়ে কাজ করি। পাইকারি প্রতি কেজি মধুর দাম ধরা হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন শাকিল জানান, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে এ বছর প্রায় ১৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষকগণ সামান্য কিছু স্থানীয় জাতসহ উন্নত জাতের সরিষা চাষ করেছে। সরিষা নভেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে আবাদ শুরু করতে হয়। ফসল ঘরে উঠতে সময় লাগে জাত ভেদে ৮৫ থেকে ৯০ দিন। তিনি আরও জানান, নাগরপুর উপজেলায় স্থানীয়ভাবে কোনো মৌ চাষ করা হয় না। যারা মৌ চাষ করছেন তারা সকলেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা চাষী। তাই এখানে মৌ চাষে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এই পর্যন্ত নাগরপুর উপজেলায় ৪০৮০ টি বক্স স্থাপন করা হয়েছে।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com
Copyright © 2024 RED TIMES. All rights reserved.