আজ বৃহস্পতিবার, ৯ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্ধারিত সময়ের ২৪ দিন পরেও শুরু হয়নি বাধেঁর কাজ, পিআইসি গঠনে অনিয়ম দূর্নীতির বিস্তর অভিযোগ

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ৮, ২০২৫, ০৫:১২ অপরাহ্ণ
নির্ধারিত সময়ের ২৪ দিন পরেও শুরু হয়নি বাধেঁর কাজ, পিআইসি গঠনে অনিয়ম দূর্নীতির বিস্তর অভিযোগ

Sharing is caring!

মোঃ ওবায়দুল হক মিলন, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলায় এক যোগে গেল ১৫ই  ডিসেম্বর থেকে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলেও এখনো কিছু উপজেলায় পিআইসি কমিটি গঠনে চলছে উৎকোচের বাণিজ্যে। টাকার বিনিময়ে এসও(উপ সহকারী প্রকৌশলী) ও স্থানীয় কিছু বিগত সরকারের আমলের দোসরদের পিআইসি পাইয়ে দেয়ার তৎপরতা।
গত ১৫ই ডিসেম্বর ফসল রক্ষা বাধঁগুলো কাজ শুরু করে আগামী ২৮  ফেব্রয়ারীর  ২৮ তারিখের মধ্যে  সকল কাজ শেষ করার বাধ্য বাধ্যকতা থাকলে কাজ শুরু এবং শেষ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে চরম আশংঙ্কা রয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমার ২৪দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো কিছু উপজেলায় পিআইসি গঠনের ঘোষ বাণিজ্যে,কমিটির নাম এখনো প্রকাশ করে ওর্য়াক অর্ডার না দেয়া কাজ শুরু না হওয়া।  গেলবছরের আওয়ামীলীগের অনেক কমিটিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার একটি ক্ষোভ রয়েছে সাধারন কৃষকদের মাঝে।
 ফলে সময় মতো কাজ শুরু না করায় সময়মতো কাজ শেষ হবে কিনা এবং পাহাড়ি ঢল ও  আগাম বন্যায় কৃষকদের কষ্টার্জিত সোনালী ফসল বানের পনিতে তলিয়ে যাবার আশঙ্কা থেকেই যায়। বিশেষ করে জেলার দিরাই,শাল্লা,তাহিরপুরে ফসলরঁক্ষা বাধেঁর কাজ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক দূর্নীতির অভিযোগ। দিরাই উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মোনায়েম হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে ঘোষ বাণিজ্যের মাধ্যমে তার অনুগতদের পিআইসি পাইয়ে দেয়া প্রবনতা এমন অভিযোগ প্রকৃত পিআইসি পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত কৃষকদের। তারা বলেন,এই এসও মোনায়েম হোসেন ও শাল্লার এসও রিপন মিয়া মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের দোসরদের পিআইসি পাইয়ে দিতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
প্রসঙ্গত: – সুনামগঞ্জ  জেলার  ১২  উপজেলায়  কৃষকদের একমাত্র বোরো ফসলের সুরক্ষায় ২০২৪-২০২৫ অর্থ  বছরে জেলার ৫৩টি হাওরে ৫৮৮ কিলোমিটার জুড়ে হাওর ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই  প্রকল্প  তৈরির  কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অবশ্য কয়েকটি  উপজেলায় হাওর ফসলরক্ষা বাঁধের  কাজ শুরু হলেও এখনো শুরু হয়নি দিরাই ও শাল্লা এই দুই উপজেলায়।
  আবার   কোন কোন উপজেলার  পিআইসি গঠন  হলেও  কার্যাদেশ দেয়া হয়নি এখনো ফলে ঐ সব হাওরে এখনো শুরু হয়নি ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ।   আবার  কোন কোন  জায়গাতে হাওরের  পানি এখনও  না নামার  কারণে কাজ  শুরুই  হয়নি। ফলে কৃষকদের মাঝে অজানা এক আশংকা কাজ করছে।
চলতিবছরে জেলার সবকটি হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪  থেকে আগামী  ২৮  ফেব্রয়ারি ২০২৫ এর  মধ্যে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার বাধ্যবাদকতা দেয়া হয়েছে। এদিকে নির্ধারিত ১৫ ডিসেম্বর জেলাব্যাপী বাঁধ নির্মাণ কাজের নাটকীয় উদ্বোধনের অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে। উদ্বোধনের খবর জেলা কমিটির অনেককেই অবহিত করা হয়নি।
ফলে বিগত সরকারের মতো এবারও বাঁধের কাজের অনিয়ম দুর্নীতির শঙ্কায় রয়েছেন হাওরে কৃষকরা। এদিকে বাঁধের কাজে বিলম্বিত  হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে হাওর ও কৃষকের সংগঠন হাওর বাঁচাও আন্দোলন। সংগঠনের  কেন্দ্রীয়  সাধারন সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন সময় মতো কাজ শুরু না হলে আগাম বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগের শংঙ্কা থেকেই যায়। তিনি দ্রুত  কাজ শুরু করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার আহবান জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই এবারও যদি নির্ধারিত সময়ের আগে বাঁধের কাজ শেষ না করা হয় আর এতে কৃষকের ফসল ঝুঁকিতে থাকে তাহলে কৃষকদের সাথে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। আমরা দাবি করবো সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এখনই সতর্ক হবেন।
 এ ব্যাপারে জেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও  এখন ও অনেক জায়গাতেই কাজ শুরুই হয়নি। ৫/৬ জানুয়ারীর দিকে পিআইসির কমিটি গঠন কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন হয়নি। আজ ৮ ডিসেম্বর এখনো দিরাই শাল্লা ও তাহিরপুরের কিছু হাওরে কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। বাঁধের পাশে যে সাইনবোর্ড লাগানোর কথা তা এখনও সবখানে লাগানো হয়নি। সুনামগঞ্জ শহরের সাইনবোর্ড তৈরির দোকানে এখনও শোভা পাচ্ছেনা তিনি দাবী করেন এখন পর্যন্ত ৩৩/৩৪ শতাংশ কাজ হয়েছে। দ্রুত গতিতে কাজ শেষ না করলে বিপদের আশঙ্কার কথা ও জানান শুভ।  শান্তিগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের অভিযোগ সাইনবোর্ড এর জন্য আলাদা করে টাকা নেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী  ও  জেলা  কাবিটা কমিটির সদস্য সচিব মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, হাওর থেকে পানি না নামায় কাজ শুরু করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর জেলার প্রতি উপজেলায় বাঁধের কাজ উদ্বোধন হয়েছে,পানি সরলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। তিনি জানান মোট ৬৭৫ টি বাঁধের মধ্যে আনুমানিক তিনশো বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। বাকী গুলোও দ্রুত  সময়ের মধ্যে শুরু করা  হবে। দুয়েকটি উপজেলার সমস্যার কথাও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে  জেলা কাবিটা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ডঃ মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া জানান সব জায়গাতেই কাজ শুরু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পঞ্চাশ ভাগ কাজ হয়েছে এবং বাকী গুলো পানি নামলেই শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত: সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার মোট ৬৭৫টি পিআইসির বিপরীতে ৫৮৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ কাজের জন্য এবার ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি ১৯ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ক্লোজার বা বড় ভাঙ্গন রয়েছে ১০৫ টি।