আজ সোমবার, ২৭শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাগনার হাওরের পানি নিষ্কাশন না হলে, অনাবাদি থেকে যাবে ৫ হাজার হেক্টর জমি

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৩:১৮ অপরাহ্ণ
পাগনার হাওরের পানি নিষ্কাশন না হলে, অনাবাদি থেকে যাবে ৫ হাজার হেক্টর জমি

Sharing is caring!

মোঃ ওবায়দুল হক মিলন, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জ জেলার ৯৫টি হাওরের মধ্যে অন্যতম পাগনার হাওর। পাগনার হাওরে ১৬ হাজার ১১৭ হেক্টর জমির মধ্যে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ রয়েছে ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর। এই হাওরের ফসল ঘরে তুলতে পারলেই হাসি ফুটে দুর্গম এলাকার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের মুখে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে এই হাওরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ঠিকমতো বোরো চাষাবাদ করতে পারছেন কৃষকরা। চলতি বোরো মৌসুমেও জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। পাগলার হাওরপাড়ের কৃষকরা জানিয়েছেন, হাওরের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম দুইটি খাল হচ্ছে গজারিয়া ও ডালিয়া খাল। উজান থেকে আসা পলি মাটিতে খালের উৎসমুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় হাওরের পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। ফলে কৃষকের জমিতে পানি আটকে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। যেখানে মওসুমের এই সময়টাতে ধানের চারার সবুজের সমারোহ দোল খাওয়ার কথা সেখানে হাওরে ঢেউ খেলছে জলাবদ্ধতার পানি। এতে বিপাকে পড়েছেন জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ও ফেনারবাক ইউনিয়নের পাগনার হাওরপাড়ের ৫০ গ্রামের কৃষক। তারা জানিয়েছেন পানি নিষ্কাশন না হলে অনাবাদি থেকে যাবে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি।
ফেনারবাঁক গ্রামের শাহ আলম নামের এক কৃষক বলেন, হাওরে আমার ৪০ কেয়ার জমি রয়েছে। জমিতে এখনো কোমরের নিচে পানি। পানি না কমায় চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। আমার মতো হাজারো কৃষক রয়েছেন যাঁরা এক কেয়ার জমিও রোপণ করতে পারেননি। চাষাবাদের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু হাওরে থেকে পানি সরছে না। গজারিয়া খাল খনন করে পানি নিষ্কাশনের জন্য চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়েছি কিন্ত কেউ আমাদের কথা আমলে নিচ্ছেন না। রইস উদ্দিন চৌধুরী নামের আরেক বুনিয়াদি কৃষক বলেন, এক ফসলি জমির উপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। ধান চাষ না করতে পারলে পরিবার-পরিজন চালানো কষ্ট হয়ে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে হাজার হাজার কৃষক তাদের জমি রোপণ করতে পারেনি। আমি নিজেও ভুক্তভোগী। জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কাজ হয়নি। এখন আমাদের ভরসা কেবল উপরওয়ালার প্রতি। হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য গত অর্থ বছরে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে গজারিয়া খাল খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। অপরিকল্পিত খনন কাজ এবং লুটপাটের কারণে এই প্রকল্প সাফল্যের মুখ দেখেনি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় কৃষক নেতা জুলফিকার চৌধুরী রানা বলেন, পাগনার হাওরের পানি নিষ্কাশন গজারিয়া ও ডালিয়া খাল দিয়ে হয়ে থাকে। গত বর্ষায় খালের স্লুইসগেইট খুলে পানি প্রবেশ করানো হয় হাওরে। এসময় উজানের পলি এসে খালের উৎসমুখ ভরাট হয়ে যায়। এ কারণে এবার হাওরের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে খাল খননের দাবি জানিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খাল খননের নামে ভাউতাভাজি প্রকল্প দিয়ে অনিয়ম লুটপাট করে থাকেন। দ্রুত সময়ে খাল খনন করে হাওরের জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনের দাবি তার।
হাওরের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমস্যা নিরসনে খাল খননের কথা জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জনি বলেন, পাগনার হাওরের পানি নিষ্কাশন না হওয়ার একামাত্র কারণ খাল ভরাট হয়ে যাওয়া। আমরা বিগত সময়ে ছোট ছোট প্রকল্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু এটির কোনো কার্যকর সমাধান হয়নি। জলাবদ্ধতার স্থায়ি সমাধানে বড় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খনন কাজ করা জরুরি বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আবারও খাল খননের জন্য প্রকল্প গ্রহণে কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। আশা করছি প্রকল্পের অনুমোদন হলে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমস্যার সমাধান হবে।