আবির হোসেন, ইবি প্রতিনিধি:
শ্রেণিকক্ষ সংকটে একাডেমিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের৷ পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাবে ঠিকমতো ক্লাস, পরীক্ষা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রমে নিয়মিত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে৷ এদিকে এই সংকটকালীন মুহূর্তে কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের জন্য আলাদা কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে ক্যাম্পাসে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন লোক প্রশাসন বিভাগের অ্যালামনাই কমিটি। সম্প্রতি শ্রেণিকক্ষের সঠিক বন্টনের দাবিতে মুখোমুখি অবস্থানে অবস্থানে দাঁড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি বিভাগ। এরমধ্যে একাডেমিক কার্যক্রমের বাইরে শুধুমাত্র অ্যালামনাইদের জন্য আলাদা কক্ষ বরাদ্দের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক অনুষদের ডিন, বিভাগের সভাপতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনের ২৩১ নং কক্ষ লোকপ্রশাসন বিভাগের অ্যালামনাইদের জন্য বরাদ্দ দেন। এ বিষয়ে লোক প্রশাসন বিভাগ অ্যালামনাই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি চিঠি দেন ড. মতিন। চিঠিতে কক্ষ বরাদ্দের বিষয়টিকে ‘আনন্দ সংবাদ’ হিসেবে উল্লেখ করে কক্ষটির ডেকোরেশন সহ অন্যান্য সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রমের আর্থিক বিষয় অ্যালামনাই কমিটিকে বহন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ওই কক্ষটি আগামীকাল শনিবার (০৯ নভেম্বর) উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে।
একাধিক অনুষদের ডিন ও বিভাগের সভাপতি সূত্রে জানা যায়, কক্ষ বরাদ্দের জন্য প্রথমে অনুষদভুক্ত বিভাগের সভাপতিদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তীতে উপাচার্যের অনুমোদন সাপেক্ষে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে লোকপ্রশাসন বিভাগের এই কক্ষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনুষদের ডিন কোনো ধরনের সভা করেননি। অন্যান্য বিভাগের সভাপতিদের সম্মতি ছাড়াই নিজস্ব সিদ্ধান্তে এবং উপাচার্যের অনুমোদন ছাড়াই কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই তিনি এ কক্ষ বরাদ্দ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তার এই কক্ষ বরাদ্দের পেছনে বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। অভিযোগ উঠেছে, অ্যালামনাই সভাপতি পুলিশের বড় কর্তা হওয়ায় তার কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নেওয়ার জন্য ডিন এই কাজ করেছেন।
এদিকে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা। বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের সভাপতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, যেখানে বেশ কিছু বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার মতো জায়গা নেই, সেখানে তারা অ্যালামনাইদের জন্য আলাদা রুম নিচ্ছে। বিষয়টি চরম অনিয়ম এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার হরণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয় অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ বিষয়ে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, এটা কোনোভাবেই ঠিক না। কক্ষ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ডিনের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সভাপতিদের নিয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে উপাচার্যের কাছ থেকে এটির অনুমোদন নিতে হয়। আমার জানা মতে অন্য কোনো বিভাগের অ্যালামনাইদের জন্য কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অ্যালামনাইদের জন্য কেন কক্ষ বরাদ্দ দিতে হবে এটা আমার বোধগম্য নয়। তাদের তো এখানে কোনো কাজ নেই, বছরে হয়তো একবার মিটিং থাকে। এটা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্য।
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, আমাদের অনুষদের কোনো বিভাগের অ্যালামনাইদের জন্য কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া নেই। এমনিতেই আমাদের শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা নেই, শিক্ষকরাও একেক রুমে দুই তিনজন করে বসতে হয়। শ্রেণিকক্ষের সংকটকালীন সময়ে কোনো কক্ষ যদি অপ্রয়োজনে পড়ে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই দৃষ্টিকটু। কক্ষগুলো যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি। এভাবে কোনো কক্ষ পড়ে থাকলে শ্রেণিকক্ষ সংকটে থাকা শিক্ষার্থীরা এসব কক্ষ ব্যবহারের জন্য দাবি তুলতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে এসব বিষয় দেখভালের একটি আলাদা কমিটি থাকা দরকার। যারা কক্ষ বরাদ্দ এবং কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে উদ্ভুত সকল প্রকার সমস্যা সমাধানে কাজ করবে।
লোকপ্রশাসন অ্যালামনাই কমিটির সভাপতি শামীনুর রহমান বলেন, কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া কমিটি কিংবা এর প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমাদেরকে কক্ষ দেওয়া হচ্ছে, আমরা সেটি নিচ্ছি। কোন প্রক্রিয়ায়, কিভাবে কক্ষ বরাদ্দ হয়েছে এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমাদের অ্যালামনাইদের জন্য যে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেটির আয়তন খুব ছোট, সবমিলিয়ে ১৫-২০ জন বসতে পারবে। এই কক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম করা সম্ভব নয়। এছাড়া কক্ষটি অ্যালামনাইদের জন্য বরাদ্দ দিলেও বিভাগের যেকোনো প্রয়োজনে কক্ষটি ব্যবহার করতে পারবে।
কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান বলেন, কক্ষ বরাদ্দ দিতে উপাচার্যের কোনো অনুমোদন লাগে না। অনুষদের ডিন চাইলেই কক্ষ বরাদ্দ দিতে পারে। তবে অনুষদের অন্যান্য বিভাগের অ্যালামনাইদের জন্য কক্ষ বরাদ্দ দিয়েছেন কি-না জিজ্ঞেস করলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। আগামীকাল শনিবার তিনি ক্যাম্পাসে আসলে এ বিষয়ে তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য এ প্রতিবেদককে অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ
বলেন, কক্ষ বরাদ্দ অনুষদীয় মিটিংয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এর ব্যতিক্রম হলে সেটি স্বাভাবিক অনুশীলনের ব্যত্যয়। ডিন চাইলে কক্ষটি সাময়িকভাবে ব্যবহার করতে দিতে পারেন। কিন্তু বরাদ্দ শব্দ ব্যবহার করে দিতে পারেন না। এছাড়া এভাবে কক্ষ বরাদ্দ দিলে ৩৬ টা বিভাগেই দিতে হবে, এটা কঠিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এই প্র্যাকটিস নেই। ওই কক্ষটি ব্যবহারের বিষয়ে আমাকে অবহিত করার একটা চিঠির বিষয়ে শুনেছিলাম। কিন্তু চিঠিটি আমার সামনে আসেনি। আমাদের কাছে এলে সঠিক নিয়ম মেনে করা হয়েছে কি-না দেখব।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com
Copyright © 2024 RED TIMES. All rights reserved.